আবু বকর রা. খলিফা নির্বাচিত হলেন যেভাবে
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর তার উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। কিছু গোত্র পুরনো প্রথা অনুযায়ী, গোত্রভিত্তিক নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। আনসাররা সাকিফা নামক স্থানে একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করে।
এরপর আবু বকর, উমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ওই আলোচনা সভায় গিয়ে হাজির হন। সভার আলোচনায় এক পর্যায়ে ওমর ইবনুল খাত্তাব আবু বকরের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহও তার অনুসরণ করেন। এরপর বাকিরাও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নেতা হিসেবে মেনে নেন। এর মাধ্যমে তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন।
এরপর ৮ জুন ৬৩২ থেকে ২২ আগস্ট ৬৩৪ পর্যন্ত মাত্র ২৭ মাস স্থায়ী ছিল আবু বকরের খিলাফত। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাকে বেশ কিছু অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হতে হয় এবং তিনি এসব সফলভাবে মোকাবিলা করেন।
খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার প্রথম ভাষণে বলেন, ‘আমি আপনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নই। আপনাদের সকলের সাহায্য ও পরামর্শ আমার কাম্য। আমি ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে আপনারা আমাকে সমর্থন করবেন। বিপথগামী হলে আমাকে উপদেশ দেবেন। আমি বরণ করব সত্য, বর্জন করব মিথ্যা। আমার চোখে ধনী-নির্ধন, সবল-দুর্বল সকলেই সমান। আপনারা আমাকে ততক্ষণ মেনে চলবেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে মেনে চলব। অন্যথায় আপনাদের নেতা হওয়ার আমার কোনো অধিকারই নেই।’
আরও পড়ুন
জানা যায়, খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যথারীতি কাপড়ের ব্যবসার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ জবাবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ব্যবসা করতে বাজারে যাচ্ছি।’ তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এভাবে বাজারে গেলে খেলাফতের কাজ কীভাবে চলবে?’ আবু বকর বললেন, ‘তাহলে আমার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের কী হবে?’
ওমর বললেন, ‘আপনার হাতে মুসলমানদের যে কোষাগার (বায়তুল মাল) আছে, তা থেকে আপনার ভরণ-পোষণের খরচ বাবদ ভাতা নির্দিষ্ট করা হবে। যেহেতু আপনি সকল মুসলমানের তরফে খেলাফতের কাজে নিয়োজিত আছেন।’ অতঃপর তারা দুজন মিলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শে একজন সাধারণ মুহাজিরের ভাতার সমপরিমাণ ভাতা খলিফার জন্য নির্ধারণ করলেন।
একদিন খলিফার স্ত্রী কিছু মিষ্টিদ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে খলিফা বললেন, আমার কাছে অতিরিক্ত পয়সা নেই, আর বায়তুল মালের পয়সা জনগণের। এ সময় খলিফার স্ত্রী জানালেন, দৈনন্দিন পারিবারিক খরচ থেকে তিনি কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছেন। এই অর্থ দিয়ে মিষ্টিদ্রব্য আনার জন্য খলিফাকে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু খলিফা বললেন, অভিজ্ঞতা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই পরিমাণ পয়সা বায়তুল মাল থেকে কম নিলে পরিবার-পরিচালনায় কোনোরূপ অসুবিধা হবে না। অবশেষে খলিফার হুকুমে স্ত্রীর সঞ্চিত পয়সা বায়তুল মালে জমা করে দেওয়া হলো, একই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন, পরবর্তী সময়ে এই পরিমাণ পয়সা যেন তার বেতন থেকে কম দেওয়া হয়।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জনগণ ও সেনাবাহিনীকে দশটি অমূল্য উপদেশ দিয়েছিলেন- ‘কাউকে প্রতারিত কোরো না, চুরি কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না, কারও অঙ্গচ্ছেদ কোরো না, স্ত্রী লোক ও বৃদ্ধকে হত্যা কোরো না, খেজুর গাছ নষ্ট কোরো না, ফলবান বৃক্ষ নষ্ট কোরো না, শস্য বা শস্যক্ষেত নষ্ট কোরো না এবং প্রয়োজন ছাড়া গবাদিপশু হত্যা কোরো না।
এনটি