নেতা নির্বাচনে মুসলিম হিসেবে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দেবেন
নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা পুরো জাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। জনগণের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আদর্শবান, সৎ ও খোদাভীরু প্রতিনিধি নির্বাচিত করা ভোটারের নৈতিক দায়িত্ব।
কোনো নির্বাচনী এলাকায় ভালো, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি প্রার্থী থাকার পরও তাকে ভোট না দিয়ে অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। সৎ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও সৎ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকে ভোট দেয়া নৈতিক দায়িত্ব। কারো ভোটের কারণে কোনো সৎ প্রার্থী নির্বাচিত হলে পরবর্তীকালে তিনি উন্নয়নমূলক ও সৎ কাজ করবেন এর সাওয়াব ভোটদাতাও পাবেন।
বিপরীতে কারো ভোটের কারণে যদি দেশ-সমাজ ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অসৎ ব্যক্তির হাতে চলে যায় এবং এ কারণে ইসলামের ওপর আঘাত আসে, জনগণের অধিকার হরণ হয়, তাহলে এর জন্য ভোটদাতাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভোটারের কাছে ভোট বিশেষ একটি আমানত। ভোটের ব্যাপারটি শুধুমাত্র পার্থিব নয়; পরকালেও এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
ভোট সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। ভোট দেওয়া মানে সাক্ষ্য প্রদান ও সত্যায়ন করা। কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, তিনি সৎ ও যোগ্য। ইসলাম ও দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা এবং জনগণের অধিকার আদায়ে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত।
প্রার্থী সম্পর্কে জানা-শোনার পরেও অসৎ ব্যক্তিকে ভোট বা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে তিনি যদি নির্বাচিত হন এবং এর কারণে পরবর্তীতে তিনি যত অসৎ কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবেন সেই পাপের অংশে ভোটাররাও শরিক হবে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক সৎকাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৮৫)।
কোরআনুল কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছ, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তদাপিও।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ১৩৫)।
আরও পড়ুন
আরেক আয়াত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অটল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের আক্রোশের কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত, ৮)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে পাকে আরও ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যাবতীয় আমানত তার উপযুক্ত লোকদের নিকট অর্পণ করো।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ৫৮)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষি হয়ে দাঁড়াও।’ (সুরা নিসা আয়াত-১৩৫)।
কোরআনে আরও এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করো না এবং নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। (সূরা আনফাল, আয়াত, ২৭)।
যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রার্থী হবার যোগ্য নয়, ফাসিক, অসৎ ব্যক্তি নির্বাচনে পদপ্রার্থী হলে তাকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত একজন সৎ ভোটারের। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা হজ, আয়াত, ৩০)।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে সতর্ক করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ। হজরত আয়মান বিন আকরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন নবীজি খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে লোক সকল! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা একই রকম’। (তিরমিজি, হাদিস, ২২৯৯)।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, মাতাপিতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বুখারি, হাদিস, ২৫১০)।
এজন্য একজন সৎ ভোটারের দায়িত্ব হলো যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা। অন্যথায় আমানতের খেয়ানত করার কারণে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই সৎ, যোগ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ভোটারদের নৈতিক দায়িত্ব।