উসমান রা.-এর নাম ‘গনি’ হলো যেভাবে
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ১৫শ বছর পরে বর্তমানে বিশ্বের প্রভাবশালী ধর্মগুলোর অন্যতম ইসলাম। বিশ্বজুড়ে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ।
মক্কার কাফেরদের নির্যাতন
বর্তমানে মুসলিমদের প্রভাবপ্রতিপত্তি অনেক বেশি হলেও ইসলামের প্রাথমিক যুগে মোটেও তা এমন ছিল না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়তের দায়িত্ব পাওয়ার পর যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার কাফেরদের ইসলামের পথে আহ্বান করেছিলেন তখন মক্কাবাসী তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। তাকে হত্যার মতো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এসময় কাফেরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের অন্যতম একজন ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
ইসলাম বিদ্বেষীরা
উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইতিহাসে বিখ্যাত উসমান ‘গনি’ নামে। তার নামের সঙ্গে ‘গনি’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার পেছনে রয়েছে চমৎকার একটি ঘটনা। ঘটনাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তৎকালীন শক্তিশালী রোম সাম্রাজ্যের ইসলাম বিদ্বেষ।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মক্কার কাফেরদের অত্যাচার সীমাহীন বেড়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি সাহাবিদের নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে তাকে ইহুদিদের সঙ্গে মিলে কষ্ট দিয়েছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। এর বাইরে বিভিন্ন ইসলাম বিদ্বেষী রাষ্ট্রও ইসলামকে সহ্য করতে পারছিল না। এমন রাষ্ট্রের একটি ছিল রোম সাম্রাজ্য। তারা ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে মুসলমানদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিল।
রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা
তৎকালীন রোম সাম্রাজ অনেক শক্তিশালী ছিল, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে মুকাবিলা করার মতো সৈন্য-সামর্থ্য ছিল না মুসলমানদের। তাই রোমানদের এই যু্দ্ধ প্রস্তুতির কথা জেনে উদ্বিগ হয়ে পড়লেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
কিন্তু শত্রু যত শক্তিশালীই হোক প্রতিরোধ তো গড়তে হবে। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক ভেবেচিন্তে সাহাবিদের সামনে যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন। আল্লাহর রাসূলের ঘোষণার পর মদিনায় যুদ্ধের প্রস্ততি শুরু হয়ে গেল। ইতিহাসে এই যুদ্ধই মুতারযুদ্ধ হিসেবে প্রসিদ্ধ।
দানের আহ্বান
তখন গ্রীস্মকাল ছিল, মদিনায় খাবারের পানি অভাব দেখা দিল। মুসলমানদের অস্তশস্ত্র্রও ছিল কম, যুদ্ধের জন্য অস্ত্র্রশস্ত্র জোগাড় করা নিয়ের সমস্যা দেখা দিল। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে এগিয়ে আসতে বললেন এবং সবাইকে দানের আহ্বান করলেন।
আরও পড়ুন
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ ইসলামের প্রয়োজনে যে যা দান করবে জান্নাতে সে তার বহুগুণ উত্তম ফল পাবে। নবীজির আহ্বানের পর সাহাবিরা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করতে শুরু করলেন। একে অপরের থেকে বেশি দানের চেষ্টা করলেন। সাহাবিদের মাঝে নিজের সব কিছু উজার করে দান করার প্রতিযোগিতা শুরু হলো।
উসমান রা.-এর দান
দানের এই প্রতিযোগিতায় হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন। সে বছর আল্লাহ তায়ালা তার ব্যবসায় আশানুরূপ বরকত ও সাফল্য দিয়েছিলেন। মুসলমানদের দুর্দিনে তিনি সব কিছু উজাড় করে দান করলেন। সবাই মিলে যা দান করলেন তিনি একাই প্রায় তার তিন ভাগের এক ভাগ দান করলেন।
তিনি এক হাজার উট, সত্তরটি ঘোড়া ও এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করে সবাইকে অবাক করে দিলেন। তার দানের সামগ্রীতে মদিনার এক বিরাট মাঠ ভরে গেল।
উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এমন দিলখোলা দানে খুশি হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি খুশি হয়ে বললেন, উসমান তুমি ‘গনি’। আল্লাহ তায়ালা তোমাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন।
উসমান রা. ‘গনি’ হলেন যেভাবে
সেদিন থেকেই উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে গেলেন উসমান ‘গনি’। ‘গনি’ শব্দের অর্থ হলো ধনী। তবে এই উপাধি বা ধন-সম্পদের কারণে উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মনে একটুও অহকারবোধ ছিল না। তিনি এইসব যশখ্যাতি ও সম্পদের মোহ থেকে দূরে থেকে আজীবন নিজেকে ইসলামের অগ্রযাত্রায় ব্যস্ত রেখেছিলেন।