সূরা শামসে যা বলা হয়েছে
সূরা শামস পবিত্র কোরআনের ৯১ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১৫। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত।
সূরা শামস
وَالشَّمۡسِ وَضُحٰہَا ۪ۙ ١ وَالۡقَمَرِ اِذَا تَلٰىہَا ۪ۙ ٢ وَالنَّہَارِ اِذَا جَلّٰىہَا ۪ۙ ٣ وَالَّیۡلِ اِذَا یَغۡشٰىہَا ۪ۙ ٤ وَالسَّمَآءِ وَمَا بَنٰہَا ۪ۙ ٥ وَالۡاَرۡضِ وَمَا طَحٰہَا ۪ۙ ٦ وَنَفۡسٍ وَّمَا سَوّٰىہَا ۪ۙ ٧ فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَتَقۡوٰىہَا ۪ۙ ٨ قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا ۪ۙ ٩ وَقَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ؕ ١۰ کَذَّبَتۡ ثَمُوۡدُ بِطَغۡوٰىہَاۤ ۪ۙ ١١ اِذِ انۡۢبَعَثَ اَشۡقٰہَا ۪ۙ ١٢ فَقَالَ لَہُمۡ رَسُوۡلُ اللّٰہِ نَاقَۃَ اللّٰہِ وَسُقۡیٰہَا ؕ ١٣ فَکَذَّبُوۡہُ فَعَقَرُوۡہَا ۪۬ۙ فَدَمۡدَمَ عَلَیۡہِمۡ رَبُّہُمۡ بِذَنۡۢبِہِمۡ فَسَوّٰىہَا ۪ۙ ١٤ وَلَا یَخَافُ عُقۡبٰہَا ٪ ١٥
সূরা শামসের অর্থ :
শপথ সূর্যের ও তার বিস্তৃত রোদের। এবং চাদের, যখন তা সূর্যের পেছনে পেছনে আসে। এবং দিনের, যখন তা সূর্যকে প্রকাশ করে। এবং রাতের, যখন তা সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। শপথ আকাশের ও তাঁর যিনি তা নির্মাণ করেছেন। এবং পৃথিবীর ও তাঁর যিনি তাকে বিস্তৃত করেছেন। এবং মানবাত্মার ও তাঁর, যিনি তাকে পরিপাটি করেছেন। অতঃপর তার জন্য যা পাপ এবং তার জন্য যা পরহেযগারী, তার ভেতর সেই বিষয়ক জ্ঞানোন্মেষ ঘটিয়েছেন। সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে। আর ব্যর্থকাম হবে সেই, যে তাকে (গুনাহের মধ্যে) ধসিয়ে দেবে। ছামুদ জাতি অবাধ্যতাবশত (তাদের নবীকে) অস্বীকার করেছিল। যখন তাদের সর্বাপেক্ষা নিষ্ঠুর ব্যক্তি উঠে পড়ল। তথাপি তারা তাদের রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করল এবং উটনীটিকে মেরে ফেলল। পরিণামে তাদের প্রতিপালক তাদের গুনাহের কারণে তাদেরকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে সব একাকার করে ফেললেন। আর তিনি এর কোন মন্দ পরিণামের ভয় করেন না।
সূরা শামসে মানুষের ভালোমন্দ কাজের বিষয়ে যা বলা হয়েছে
এই সূরার শুরুতে সূর্য, চাঁদ, দিন, রাত, আকাশ, পৃথিবী, মানুষের প্রাণ- এই সাতটি জিনিসের শপথ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। মানুষের জীবনের সঙ্গে উৎপ্রোতভাবে জরিয়ে থাকা বিষয়গুলোর শপথ শেষে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মানুষের সামনে তিনি নেকি ও গুনাহ উভয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং চিনিয়ে দিয়েছেন।
একথাটিই অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, ‘আর আমি ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য সুস্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি।’ (সূরা আল-বালাদ, আয়াত, ১০) আবার কোথাও বলা হয়েছে, ‘আমি তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে হতে পারে অস্বীকারকারী।’ (সূরা আল-ইনসান, আয়াত, ৩)
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করার পর তার মাঝে গুনাহ ও ইবাদত উভয় কাজের যোগ্যতা দিয়েছেন। এরপর তাকে এক ধরনের ক্ষমতা দিয়েছেন যাতে সে স্বেচ্ছায় গুনাহের পথ অবলম্বন করতে পারে অথবা ইবাদতের পথ। যখন সে নিজ ইচ্চা ও ক্ষমতায় এই দুয়ের মধ্যে কোনো একটি অবলম্বন করে তখন তার ইচ্ছা বা ক্ষমতার ভিত্তিতে সে সওয়াব অথবা আজাবের যোগ্য হয়।
এই তাফসীর অনুযায়ী এমন প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই যে, মানুষের সৃষ্টির মধ্যেই যখন পাপ ও ইবাদত নিহিত আছে, তখন সে তা করতে বাধ্য। এর জন্যে সে কোন সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হবে না।
আরও পড়ুন
এরপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে নিজেকে শিরক, অবাধ্যতা থেকে এবং চারিত্রিক অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করবে, সে পরকালে সফলতা ও মুক্তি লাভ করবে। আর যে নিজেকে কলুষিত ও ভ্রষ্ট করবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এরপরের আয়াত থেকে আল্লাহ তায়ালা হজরত সালেহ আলাইহিস সালামের নবুওয়কালের একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তায়ালা আলাইহিস সালামকে নবী হিসেবে পাঠানোর পর তার জাতি যে দুষ্কৃতিতে লিপ্ত হয়েছিল তারা তা ত্যাগ করতে প্ৰস্তুত ছিল না এবং সালেহ আলাইহিস সালাম যে তাকওয়ার দিকে তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন তা গ্রহণ করতেও তারা চাইছিল না।
সালেহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় তাকে বলেছিল যে, যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে কোন নিশানী (মুজিযা) দেখাও। একথায় সালেহ আলাইহিস সালাম মুজিযা হিসেবে একটি উটনী তাদের সামনে উপস্থিত করেন।
তিনি বলেন, এটি আল্লাহর উটনী। যেখানে ইচ্ছা সে চরে বেড়াবে। একদিন সে একা সমস্ত পানি পান করবে এবং অন্যদিন তোমরা সবাই ও তোমাদের পশুরা পানি পান করবে। যদি তোমরা তার গায়ে হাত লাগাও তাহলে মনে রেখো তোমাদের কঠিন আজাব দেবেন আল্লাহ। একথায় তারা কিছুদিন পর্যন্ত ভয় করতে থাকলো। কিন্তু উটনীর কারণে একদিন তারা পানি পান করতে না পারার ব্যাপারটি সহ্য করতে পারলো না, একদিন তারা উটনীটিকে হত্যা করে ফেললো। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শাস্তি দিলেন।
(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন ৮/ ৭৯১)
এনটি