সূরা আল ইনশিরাহতে যে আলোচনা হয়েছে
সূরা আল ইনশিরাহ পবিত্র কোরআনের ৯৪ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা আট। সূরাটি পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত। সূরা আল-ইনশিরাহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রদত্ত বিশেষ বিশেষ অনুগ্রহ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনার ক্ষেত্রে এ সূরার সঙ্গে সূরা আদ-দোহার অর্থগত সম্পর্ক রয়েছে। (আদওয়াউল বায়ান)
সূরা আল ইনশিরাহ
اَلَمۡ نَشۡرَحۡ لَکَ صَدۡرَکَ ۙ ١ وَوَضَعۡنَا عَنۡکَ وِزۡرَکَ ۙ ٢ الَّذِیۡۤ اَنۡقَضَ ظَہۡرَکَ ۙ ٣ وَرَفَعۡنَا لَکَ ذِکۡرَکَ ؕ ٤ فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ۙ ٥ اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ؕ ٦ فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ ۙ ٧ وَاِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ ٪ ٨
সূরা আল ইনশিরাহ অর্থ :
(হে রাসূল!) আমি কি তোমার কল্যাণে তোমার বক্ষ খুলে দেইনি? এবং আমি তোমার থেকে অপসারণ করেছি সেই ভার। এবং আমি তোমার কল্যাণে তোমার চর্চাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। প্রকৃতপক্ষে কষ্টের সাথে স্বস্তিও থাকে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তিও থাকে। সুতরাং তুমি যখন অবসর পাও, তখন (ইবাদতে) নিজেকে পরিশ্রান্ত কর। এবং নিজ প্রতিপালকের প্রতিই মনোযোগী হও।
সূরা আল ইনশিরাহতে যে আলোচনা
মহান আল্লাহ এই সূরার শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া তিনটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন। তার মধ্যে তার ‘বক্ষ প্রশস্ত’ করে দেওয়া হল প্রথম অনুগ্রহ। এর অর্থ হল, বক্ষ আলোকিত এবং উদার হওয়া; যাতে সত্য স্পষ্ট হয়ে যায় এবং তার জন্য হৃদয় সংকুলান হয়।
এরপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলের ওপর থেকে ভার দূর করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, নবুওয়ত লাভের প্রথম দিনগুলোতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এই দায়িত্ব অনেক গুরুতর ও ভারী মনে হতো। আবার একই সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার তার ওপর সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচার ও কুফর শিরক ধ্বংস করে মানবজাতিকে একত্রিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার আদেশ ছিল- আপনি আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী সরল পথে অটল থাকুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলে তিলে এই দায়িত্বের ভার অনুভব করতেন। এই আয়াতে তাকে তার ওপর থেকে সেই ভার সরিয়ে দেওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
একইসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়েছে, যে তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করা হয়েছে। তাকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে অন্য কোনো সৃষ্টিকে তার মতো সম্মানীত ও প্রশংসনীয় করা হয়নি। এমনকি আজান, ইকামত, খুতবা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নামের সাথেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম স্মরণ করা হয়। এভাবে তার মর্যাদা ও স্মরণ সমুন্নত করা হয়েছে। এ-ছাড়াও তার উম্মত ও অনুসারীদের কাছে তার সম-মর্যাদার আর কেউ নেই।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একইসঙ্গে জানানো হয়েছে যে, সবধরনের কষ্টের পর স্বস্তি আসবে। নবীজির সাহাবিদের জন্যও এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, ইসলামের পথে যা কিছু দুঃখ-কষ্ট সহ্য হয়েছে এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই; আল্লাহ তায়ালা অবসর ও স্বস্তি এনে দেবেন।
সুসংবাদ দেওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হয়েছে, আপনি যখনই অবসর পাবেন তখনই ইবাদতের (দোয়া ও জিকিরে) জন্য সচেষ্ট হোন।
শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহরই কাছেই মনোযোগী হয়ে সব ইবাদত কবুল করার আশা রাখতে হবে। এ আয়াতে মুমিনদের জীবনে বেকারত্বের কোন স্থান দেওয়া হয়নি। হয় সে দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থাকবে, নয় আখেরাতের কাজে। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮/৮০৯)
এনটি