উসমান রা. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যেভাবে
হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মক্কার সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান ছিলেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ব্যবসা বাণিজ্য করা। বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় সময় তিনি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতেন।
সফল ব্যবসায়ী
তার হাতে পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়। অল্প দিনেই তিনি আরবের সফল এবং ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অঢেল ধন-সম্পদের কারণে তাকে মানুষজন গনি বলে ডাকতো। গনি অর্থ হলো ধনী।
তবে অঢেল ধন-সম্পদ থাকলেও উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কখনো সম্পদের মোহ আচ্ছন্ন করতে পারেনি। সম্পদ নিয়ে তার মনে কোনো অহংকারবোধও ছিল না। ভোগ-বিশালের নেশাতেও মত্ত হতেন না তিনি।
সমাজসেবা
উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সম্পদ সমাজ-সেবামূলক কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করতেন। গরিব-দুখীর প্রয়োজনে অকাতরে সম্পদ দান করতেন।
ইসলাম গ্রহণের আগে থেকেই তিনি অন্যায় কাজ ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকতেন। তিনি সবসময় সত্য এবং ন্যায় কাজের কথা ভাবতেন। তিনি যখন ইসলামের আহ্বান শুনেছিলেন তখনই ইসলাম গ্রহণের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা এভাবে তুলে ধরেছেন আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) তার আল-ইসাবাহ’ গ্রন্থে। ঘটনাটি উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মুখেই শুনে আসা যাক-
একদিন কাবা চত্ত্বরে
উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন আমি পবিত্র কাবা-চত্বরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমন সময় কোনো এক ব্যক্তি এসে আমাকে খবর দিল যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মেয়ে রোকাইয়াকে আবু লাহাবের ছেলে উতবার কাছে বিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু রোকাইয়া রূপ-লাবণ্য ও ঈর্ষণীয় গুণ-গরিমায় স্বাতন্ত্র্যের অধিকারিণী ছিলেন, এ কারণে তাকে স্ত্রী হিসেবে পেতে আমার আগ্রহ ছিল প্রবল।
আরও পড়ুন
কিন্তু বিয়ের সংবাদ শুনে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়লাম। সোজা চলে গেলাম বাড়িতে। তখন আমাদের বাড়িতে থাকতেন আমার খালা সাআদা। তিনি ছিলেন একজন গণক। আমাকে দেখেই তিনি অকস্মাৎ কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন, যার কোনো ভাবার্থই আমি উপলব্ধি করতে পারলাম না। সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ, যিনি আল্লাহর রাসুল, কোরআন নিয়ে এসেছেন। আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তার প্রদীপই প্রকৃত প্রদীপ, তার দ্বিনই সফলতার মাধ্যম। যখন মারামারি কাটাকাটি শুরু হবে এবং অসি উন্মুক্ত হবে এবং বর্শা নিক্ষেপ করা হবে, তখন শোরগোল হৈচৈ কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর রা.-এর কাছে...
তার এ কথা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করল। আমি ভবিষ্যতের করণীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। আমি প্রায়ই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে গিয়ে বসতাম। দুই দিন পর আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম।
তখন সেখানে কেউ ছিল না। আমাকে চিন্তিত দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আজ তোমাকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? তিনি আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তাই আমি তার কাছে আমার খালার বক্তব্য তুলে ধরলাম।
আমার কথা শুনে তিনি বলেন, উসমান, তুমি একজন বুদ্ধিমান মানুষ। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য যদি তুমি করতে না পারো তাহলে সেটা হবে একটা বিস্ময়ের ব্যাপার। তোমার স্বজাতির লোকেরা যে মূর্তিগুলোর উপাসনা করে, সেগুলো কি পাথরের তৈরি নয়? তারা কি কোনো কিছু শুনতে পায়, দেখতে পারে, কোনো উপকার-অপকারের ক্ষমতা রাখে?
ইসলাম গ্রহণ
আমি বললাম, আপনি যা বলছেন, সত্যই বলছেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার খালা যে কথা বলেছেন তা সত্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই তাকে তিনি পাঠিয়েছেন। যদি তুমি তার কাছে যাও এবং মনোযোগ সহকারে তার কথা শুনো, তাতে ক্ষতির কী আছে?
এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সঙ্গে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এগিয়ে গিয়ে তার কানে কানে কথা বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বসলেন। এরপর আমাকে বলেন, ‘হে উসমান, আল্লাহ জান্নাতের দিকে ডাকছেন। তার ডাকে সাড়া দাও। আমি তোমার এবং সমগ্র সৃষ্টিকূলের প্রতি রাসূল হয়ে প্রেরিত হয়েছি।’
উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, জানি না, আল্লাহর রাসূলের এ কথার মধ্যে কী শক্তি ছিল। আমি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম। তাত্ক্ষণিক আমার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো কালিমায়ে শাহাদাত। সাক্ষ্য দিলাম আমি এক আল্লাহর একত্ববাদের এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল ও নবী হওয়ার।
ইবনে সাআদ (রহ.) ‘তাবাকাত’ গ্রন্থে বলেন, ‘এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দারুল আরকামে অবস্থানের আগের ঘটনা।’ উসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এ ঘটনার পরই মক্কাতেই নবীর কন্যা রোকাইয়ার সঙ্গে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়। (আল-ইসাবাহ, ৮/১৭৬-১৭৮)