শীতের তীব্রতায় যেভাবে শাস্তি পাবে জাহান্নামীরা
জাহান্নামের শাস্তির কথা সামনে এলে মানুষ সাধারণত আগুনের লেলিহান শিখা, বিভিন্ন ভয়ংকর পোকা-মাকড়, সাপ-বিচ্ছু, শাস্তির জন্য নিয়োজিত ফেরেশতাদের মারধরের চিত্র কল্পনা করবেন। এসব শাস্তির সঙ্গে হাঁড় কাপানো শীতের মাধ্যমেও কষ্ট দেওয়া হবে জাহান্নামীদের। মানুষ পৃথিবীতে শীতের যে তীব্রতা অনুভব করে থাকে, তা মূলত জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অংশ বলেই হাদিসে উল্লেখ করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন করল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে, আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অনুমতি দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে দুইবার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং অপরটি গ্রীষ্মকালে।
অতএব তোমরা শীতকালে যে হিমঋতু অনুভব করো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে এবং গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উষ্ঞতা অনুভব করো তা এই কারণেই। ( বুখারি, হাদিস, ৫৩৭, ৬১৭, ৩২৬০, মুসলিম শরিফ, হাদিস, ৬১৭)
অপর এক হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, ‘জাহান্নামে প্রচণ্ড শীত রয়েছে, যাকে ‘জামহারির’ বলা হয়। এর তীব্রতা এতো বেশি হবে যে, এর কারণে হাড় থেকে শরীরের মাংস খসে পড়বে। তখন তারা জাহান্নামে আগুনের উষ্ঞতার মাধ্যমে শাস্তি চাইবে। (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৫/৩৭০)
বিশিষ্ট তাবেয়ী হজরত মুজাহিদ রহ. বলেন, ‘জামহারি’র বলা হয় এমন হিমশীতল আজাবকে যার তীব্রতা সহ্য করার ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। (সিফাতুন্নার, ১৫৩)
শীতে জাহান্নাম থেকে বাঁচার আমল
জাহান্নামের এমন শাস্তি থেকে বাঁচতে সবার উচিত বেশি বেশি ইবাদত করা। শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় মানুষের জন্য রোজা রাখা সহজ।আমির ইবনে মাসউদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘শীতকালের রোজা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৭)
একইসঙ্গে রাত গভীর হওয়ার কারণে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে শীতের রাতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সেজদাহ: ১৬) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। (সূরা আয যারিয়াত, আয়াত, ১৭)
শীতে প্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার সামর্থ্য নেই সাধ্যমতো এমন মানুষেরপাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো মুমিনের ক্ষুধায় অন্ন জোগায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল আহার করাবেন। কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো মুমিনের পিপাসায় পানি পান করায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সিল করা জান্নাতি পানীয় পান করাবেন। কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো বস্ত্রহীন মুমিনকে পরিধান করায়, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৯)