শীতকাল নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত ঋতুর এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে আল্লাহ তায়ালা কুদরত ও আশ্চর্য নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই ঘটে থাকে ঋতুর এই পরিবর্তন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা রাত-দিন ও ঋতুর এই পরিবর্তনের বিষয়ে বলেছেন,
اِنَّ فِی اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ وَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَّقُوۡنَ
নিশ্চয় দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস, (১০), আয়াত, ৬)
অপর এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ
তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন। দিনকে তিনি রাতের পর্দা দিয়ে ঢেকে দেন, তারা একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে এবং সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি তাঁরই আজ্ঞাবহ। জেনে রেখ, সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও (চলবে) তাঁর, বরকতময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক। (সূরা আরাফ,(৭), আয়াত, ৫৪)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,
فَالِقُ الۡاِصۡبَاحِ ۚ وَ جَعَلَ الَّیۡلَ سَکَنًا وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ حُسۡبَانًا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ
তিনিই রাতের আবরণ বিদীর্ণ করে রঙ্গিন প্রভাতের উন্মেষকারী, তিনিই রাতকে বিশ্রামকাল এবং সূর্য ও চাঁদকে বানিয়েছেন গণনার জন্য। এসব মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞাতা কর্তৃক নির্ধারিত। (সূরা আনআম, (৬), আয়াত, ৯৬)
আরও পড়ুন
কোরআনের এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে একথা স্পষ্ট যে দিন-রাত, শীত, গ্রীষ্ম, ঋতুর এই পরিবর্তন আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন। ঋতুর পরিবর্তন এবং শীতকালের আগমন নিয়ে আধুনিক সায়েন্সে অনেক কারণই বর্ণনা করা হয়েছে। তবে হাদিসে এর প্রকৃত কারণ বর্ণনা করেছেন আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগকে শীত-গ্রীষ্মের পরিবর্তনের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
শীতকাল নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন করল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে, আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অনুমতি দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে দুইবার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং অপরটি গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা শীতকালে যে হিমঋতু অনুভব করো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে এবং গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উষ্ঞতা অনুভব করো তা এই কারণেই। ( বুখারি, হাদিস, ৬১৭, ৩২৬০)
এই হাদিসের মাধ্যম বুঝা গেলে শীত ও গ্রীষ্মের এই পরিবর্তন হয়ে থাকে মূলত জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস ত্যাগ ও গ্রহণের কারণে। ঋতুর এই পরিবর্তনের সময় আমরা যেভাবে শীত থেকে এবং তীব্র গরম থেকে বাঁচতে চেষ্টা করি, এর থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন উপকরণ গ্রহণ করি, নিজের নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করতে টাকা-পয়সা খরচ করি, ঠিক তেমনি পরকালে জাহান্নামের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও গরম থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর আদেশ মেনে পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে হবে।