প্রিয়নবী সা.-এর নাম কয়টি ও কী কী?
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের পরে দাদা আব্দুল মুত্তালিব নাম রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’। কোরআনে নবী ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষায় বলা হয়েছে ‘আহমাদ’। নবুয়তের পূর্বে তাকে ডাকা হতো ‘আল-আমিন’ বলে।
এক হাদিসে হজরত যুবায়ের ইবনে মুতইম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পাঁচটি নাম রয়েছে, আমি ‘মুহম্মাদ’ ও ‘আহমাদ’ এবং আমি ‘মাহী’, যে নামের মাধ্যমে আল্লাহ কুফর মুছে দেন; এবং আমি ‘হাশির’, যেহেতু মানুষ পরকালে আমার ওপর নির্ভর করে সমবেত হবে; এবং আমি ‘আকিব’। (বুখারি, হাদিস, ৩৫৩২)
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে নিজের নাম এভাবে বলতেন, আমি মুহাম্মদ, আহমদ, মুকাফ্ফি, হাশির, নাবিউত তাউবা (তওবার নবী), নাবিউর রহমাহ (রহমতের নবী)।
হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ নিজেই নবীজির নামা রেখেছেন রউফ ও রহিম। (মুসলিম, হাদিস, ২৩৫৫)
ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহ বলেন, এই নামগুলো সব গুণবাচক। তাই এগুলো শুধু পরিচয়ের জন্য দেওয়া সাধারণ নামই নয়; বরং প্রতিটি নামই এমন কোনো গুণ বোঝায়, যা তার প্রশংসা ও পূর্ণতাকে অপরিহার্য করে। (জাদুল মায়াদ, খন্ড, ১, পৃষ্ঠা ৮৬)
এ-কারণেই অনেক মানুষ তার জন্যে বিভিন্ন সম্মানজনক গুণবাচক নাম ব্যবহার করেছেন এবং এ-কাজকে তারা ভেবেছেন পুণ্যের কাজ। ইবনে দিহয়া তার রচনায় ‘মুফরাদুন ফি আসমাইন নাবাবিইয়া’ শিরোনামে লিখেছেন, অনেকের অভিমত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের সংখ্যা আল্লাহর নামের মতো নিরানব্বইটি। তবে কেউ যদি গুণ ধরে ধরে তার নাম খোঁজে, তাহলে তা তিনশ’ হয়ে যাবে। (ফাতহুল বারী, খ- ৬, পৃষ্ঠা ৫৫৮)
আল্লামা কাসতালানি রহিমাহুল্লাহ বলেন, আবু বকর ইবনে আরাবি রচিত ‘আহকামুল কোরআন’ গ্রন্থে আমি দেখেছি, কয়েকজন সুফি বলেছেন, আল্লাহর এক হাজার নাম রয়েছে এবং নবীজিরও রয়েছে একহাজার নাম। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪)
তিনি তার ‘আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ’ গ্রন্থে কাজি আয়াযের ‘শিফা’ গ্রন্থের অনুকরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারশতাধিক নাম বর্ণনা করেছেন। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খ- ২, পৃষ্ঠা ১৫-২১)
এবং যেহেতু সেখানে অনেকগুলো নাম আল্লাহর নামের মতোই, তাই উভয়ের গুণাবলি ও নামের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করে তিনি একটি পৃথক অধ্যায় রচনা করেছেন, যেনো স্রষ্টা ও সৃষ্টির গুণের মধ্যে সমতা এসে না পড়ে। (কাজি আয়ায কৃত ‘আশ-শিফা’, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩৮-৩৪০)
আল্লামা যুরকানি রহিমাহুল্লাহ ইমাম গাজালির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, আমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন নাম রাখা বৈধ নয়, যা তার পিতৃপুরুষ রাখেননি, এমনকি তিনি নিজেও তার জন্যে রাখেন নি। অর্থাৎ আমাদের জন্য তার নাম রাখা বৈধ নয়, যদিও সে-নামটি সর্বস্ব গুণ প্রকাশ করে। যদি নবীর জন্য আমাদের পছন্দসই নাম রাখা বৈধ হয়, তাহলে অনেকেই হয়তো এমন নাম রেখে বসবে, যে নামের উপযুক্ত আল্লাহ ছাড়া কেউ নয়। এই উদাসীনতার ফলে সে বিরাট বিপদের মুখে পড়বে, অথচ সে বুঝতেও পারবে না, কী করেছে। (শারহুয যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১১৯)
ইমাম যুরকানি রহিমাহুল্লাহ যা বলেছেন, বাস্তবেও সেটাই সঠিক। যেহেতু নবীজির নাম কয়টি কী কী- এ বিষয়ে শরিয়তে সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
সূত্র: আকিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি ও নবী নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।