বনী ইসরাঈল আল্লাহকে দেওয়া যে অঙ্গীকার পূরণ করেনি
বনি ইসরায়েল যখন একনিষ্ঠ আসমানী ধর্মের অনুসারী ছিল তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের অসংখ্য নেয়ামত দিয়েছিলেন। তাদের আল্লাহ তায়ালা যেসব নেয়ামত দিয়েছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অত্যাচারী ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি, সমুদ্রে রাস্তার ব্যবস্থা করে তাদের ফেরাউনের রাজত্ব থেকে বের করে আনা, তীহ ময়দানে মেঘ দিয়ে ছায়া প্রদান, মান্না ও সালওয়া নাজিলকরণ, সুমিষ্ট পানির ব্যবস্থা করণ ইত্যাদি।
তাদের হিদায়াতের জন্য অগণিত অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা এবং তৎকালীন যুগে তাদের বিশ্বের সবার উপর শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتِیَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ وَ اَوۡفُوۡا بِعَهۡدِیۡۤ اُوۡفِ بِعَهۡدِکُمۡ ۚ وَ اِیَّایَ فَارۡهَبُوۡنِ
হে বনি ইসরায়েল! তোমরা আমার সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। ( সূরা বাকার, (২), আয়াত, ৪০)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরায়েলকে দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর তাদেরকে অঙ্গীকার পূরণ করার কথা বলেছেন। তাফসিরকারক কাতাদাহ রহ.-এর মতে তাওরাতে বর্ণিত সে অঙ্গীকারের কথা কোরআনের সূরা মায়েদায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَ لَقَدۡ اَخَذَ اللّٰهُ مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۚ وَ بَعَثۡنَا مِنۡهُمُ اثۡنَیۡ عَشَرَ نَقِیۡبًا ؕ وَ قَالَ اللّٰهُ اِنِّیۡ مَعَکُمۡ ؕ لَئِنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَیۡتُمُ الزَّکٰوۃَ وَ اٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِیۡ وَ عَزَّرۡتُمُوۡهُمۡ وَ اَقۡرَضۡتُمُ اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا لَّاُکَفِّرَنَّ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ لَاُدۡخِلَنَّکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۚ فَمَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ مِنۡکُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ
আর অবশ্যই আল্লাহ বনি ইসরায়েলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন দলনেতা পাঠিয়েছিলাম এবং আল্লাহ বলেছিলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদেরকে সহযোগিতা কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মুছে দেব। আর অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। এরপরও তোমাদের মধ্যে যারা কুফুরী করবে তারা সত্য সঠিক পথ হারিয়ে ফেলবে। (সূরা মায়েদা, (৫), আয়াত, ১২)
আরও পড়ুন
মুফাসসিরদের মতে,সব রাসূলের উপর ঈমান আনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। যাদের মধ্যে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এছাড়া নামাজ, জাকাত এবং মৌলিক ইবাদতও এ অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন যে, এ অঙ্গীকারের মূল অর্থ মুহাম্মাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসরণ করা।
কোরআনের এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরায়েলকে আল্লাহ প্রদত্ত অতীতের নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে বলেছেন, তোমরা সেই অঙ্গীকার রক্ষা কর, যা শেষ নবী এবং তার নবুঅতের ওপর ঈমান আনার ব্যাপারে তোমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। যদি তোমরা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করো, তাহলে আমিও আমার অঙ্গীকার রক্ষা করে তোমাদের উপর থেকে সেই বোঝা নামিয়ে দেব, যা তোমাদের ভুল-ত্রুটির কারণে শাস্তি হিসেবে তোমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তোমাদেরকে আবারও উন্নতি দান করব। আর আমাকে ভয় করো, কারণ আমি তোমাদেরকে অব্যাহত লাঞ্ছনা ও অধঃপতনের মধ্যে রাখতে পারি, যাতে তোমরা পতিত আছ এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও পতিত ছিল।
কিন্তু বনি ইসরায়েল আল্লাহকে দেওয়া সেই অঙ্গীকার অর্থাৎ, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুওত দেওয়ার পর তারা তাকে নবী হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এবং তারা বলে যে, তাওরাতে যে নবীর কথা বলা হয়েছে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নবী নন।
এনটি