বনী ইসরাঈল মুহাম্মদ সা.-কে নবী মানে না কেন?
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়ত প্রদানের সময়কালে তৎকালীন আরব সমাজে বনি ইসরায়েল বা ইহুদিদের ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ সম্মান ছিল। তাদের জ্ঞানীগুণী মনে করা হতো। আসমানী কিতাবের জ্ঞান থাকায় ধর্মীয় বিষয়ে তাদের সবাই শ্রদ্ধা করত। তাদের কথাকে মানুষ গুরুত্ব দিত।
তাওরাতে বিকৃতি
ইহুদি জাতিকে তাওরাত কিতাব দেওয়া হয়েছিল। এই কিতাবে ইহুদি (বনি ইসরায়েল) জাতিকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
প্রাচীন কালে ইহুদি আলেমরা তাওরাতের বাণীকে নিজেদের সুবিধামত পরিবর্তন করে সাধারণ ইহুদিদের কাছে প্রচার করতো, কারণ তখনকার আমলে সাধারণ ইহুদিরা নিজেরা তাওরাত পড়ত না। এই সুযোগ নিয়ে ভণ্ড রাবাইরা তাদের তাওরাতকে ব্যাপক বিকৃত করে গেছে।
যখন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়ত দেওয়া হলো- প্রথম দিকে কেউ ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়নি, উল্টো ইসলামের আওয়াজ বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগে যায়।
আরও পড়ুন
নবুওয়ত অস্বীকার
এ সময় অনেকে ইহুদি ধর্মীয় নেতাদের কাছে ইসলামের সম্পর্কে জানতে চাইতো। এই ইহুদি ধর্মীয় নেতারা তাওরাত কিতাব পড়ার কারণে খুব ভালো করেই জানতো যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ সত্য নবী ছিলেন। কিন্তু এরপরও সমাজে নিজেদের প্রভাপ্রতিপত্তি কমে যাওয়ার ভয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তকে অস্বীকার করলো।
তাওরাতে নবী মুহাম্মদ সা.-এর সুসংবাদ
অথচ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ তাওরাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরায়েলকে অনেক নবী নিয়ে সম্মানিত করেছেন তবে বনি ইসমাঈলে একজন বিশেষ নবী আগমন করবেন। যার আগমনে ইসমাঈলের বংশধর সবার থেকে সম্মানিত হবেন—এটা তাওরাতেই লেখা আছে।
কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুওত দেওয়ার পর ইহুদিরা তাকে নবী হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানালো। এবং তারা বললো তাওরাতে যে নবীর কথা বলা হয়েছে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নবী নন।
কোরআনে ইহুদিদের সত্য গোপনের বর্ণনা
ইহুদিদের সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া এবং নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চেনার বিষয়টি কোরআনে বর্ণিত করেছেন আল্লাহ তায়ালা। বর্ণিত হয়েছে,
اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡکِتٰبَ یَعۡرِفُوۡنَهٗ کَمَا یَعۡرِفُوۡنَ اَبۡنَآءَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ فَرِیۡقًا مِّنۡهُمۡ لَیَکۡتُمُوۡنَ الۡحَقَّ وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ
আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তাকে সে রকমই চিনে, যেমন চিনে নিজের পুত্রদেরকে, আর নিশ্চয় তাদের মধ্য থেকে একটি দল সত্যকে অবশ্যই গোপন করে, অথচ তারা জানে। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৪৬)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে তাওরাত ও ইঞ্জিন কিতাব দিয়েছেন, তারা সন্দেহাতীতভাবে নবী হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চেনে। তাদের কাছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হওয়ার বিষয়টি এতোটাই স্পষ্ট যেমন বাবার কাছে সন্তানের পরিচয় স্পষ্ট। নিজের সন্তানকে চিনতে যেমন বাবার কখনো কোনো সন্দেহ হয় না, ভুল হয় না, বড় কোনো জনসমাবেশে হাজার মানুষেরও ভিড়েও বাবা তার সন্তানকে ঠিক চিনে ফেলেন। ঠিক তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহ নেই।
বরং অনেক আহলে কিতাব (ইহুদি) তো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের বিষয়টি জানার পর ইসলাম গ্রহণও করে নিয়েছে, কিন্তু এরপরও তাদের অনেকে সত্য গোপন করে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তকে অস্বীকার করে।
এ কথা বলার পর আল্লাহ তায়ালা নবী ও মুসলিমদের সত্যের ওপর অটল থাকার কথা বলেছেন।
(তাফসিরে ইবনে কাসির, ২-খণ্ড, ৪৬০, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ১ম-খণ্ড, ৩৫৯)