বনী ইসরাঈল যে নবীর মায়ের ওপর অপবাদ দিয়েছিল
হজরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম হজরত ইমরানের মেয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন বনি ইসরায়েলের অন্যতম নবী হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের বংশধর। এই পরিবারটি বনি ইসরায়েলে পবিত্র পরিবার হিসেবে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছিল।
মারইয়াম আ.-এর মায়ের মানত
হজরত মারইয়ামের মা যখন গর্ভবতী হলেন তখন তিনি সেই যুগের প্রথা অনুযায়ী গর্ভের সন্তানকে দুনিয়ার সব কাজ থেকে মুক্ত করে বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থাৎ মসজিদূল আকসার খেদমতের জন্য উৎসর্গ করার মানত করলেন।
হজরত মারইয়ামের জন্মের আগে তার মা আল্লাহ তায়ালা কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে, তাকে আমি একান্ত আপনার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, কাজেই আমার পক্ষ হতে তা গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আল ইমরান, (৩), আয়াত, ৩৫)
আল্লাহ তায়ালা মারইয়াম আলাইহাস সালামের মায়ের এই মানত কবুল করলেন। মারইয়ামের মা নিজের সন্তানকে উপাসনালয়ের খেদমতের উপযুক্ত করে বড় করে তুলেছিলেন।
হজরত মারইয়াম আ.-এর ইবাদত-বন্দেগী
হজরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম পরিণত বয়সে সবসময় আল্লাহর ইবাদত, বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতেন। তার ইবাদত, আধ্যাত্মিক সাধনা ও তাকওয়ার কথা সবার মুখে আলোচিত হতো।
হজরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম ছিলেন চিরকুমারী, পূতঃপবিত্র। তিনি পুরুষদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতেন সবসময়। তবে আল্লাহ তায়ালা তার মাধ্যমে এক নিদর্শন দেখাতে চাইলেন পৃথিবীবাসীকে। তিনি হজরত জিবরাইলের মাধ্যমে মারইয়াম আলাইহাস সালামকে একজন পবিত্র পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলেন।
জিবরাইল আ.-এর সুসংবাদ
হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম মারইয়াম আলাইহাস সালামের কাছে এসে বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন দূত। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে একজন পুত্র সন্তান দান করতে চান। যিনি ভবিষ্যতে নবী হবেন এবং কোলে থাকতেই কথা বলবেন।
এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমার সন্তান কীভাবে হতে পারে, আমার তো বিয়েই হয়নি। কখনো কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি, আমি ব্যভিচারিণীও নই।
উত্তরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম মারইয়াম আলাইহাস সালামকে বললেন, এটা সত্য যে, স্বামী ছাড়া নারীর সন্তান হয় না, তবে আল্লাহ তায়ালা চাইলে সন্তান জন্মের কোনো উপকরণ ছাড়াও সন্তান জন্ম হওয়া সম্ভব। তিনি এই ঘটনাকে মানুষের জন্য নিদর্শন বানাতে চান। যেমন তিনি আদম আলাইহিস সালামকে মা-বাবা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন।
হজরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম আল্লাহর নির্দেশের কথা শুনে তা মেনে নিলেন। তখন হজরত জিবরাইল মারইয়াম আলাইহিস সালাম তার জামার কলারের মধ্যে ফুঁ দিলেন, এরপর মারইয়াম মারইয়াম আলাইহাস সালাম আল্লাহর হুকুমে গর্ভবতী হয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন
মারইয়াম-এর ওপর বনি ইসরায়েলের অপবাদ
এদিকে হজরত মারইয়ামের গর্ভের সন্তান ঈসা আলাইহিস সালাম যখন জন্ম গ্রহণ করলেন তখন তার সম্প্রদায় অর্থাৎ বনি ইসরায়েলের লোকেরা তাকে অপবাদ দিতে শুরু করল। তৎকালীন সময়ে ইউসুফ নাজ্জার নামে একজন আবেদও আল আকসার খেদমত করতেন। বনি ইসরায়েল আল্লাহর নিদর্শনের বিষয়টি না মেনে ইউসুফ নাজ্জারের সঙ্গে মারইয়াম আলাইহাস সালামকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো।
তারা মারইয়াম আলাইহাস সালামের কোলে ঈসা আলাইহিস সালামকে দেখে বলল,
(সূরা মারইয়াম, (১৯), আয়াত, ২৭-২৮)
মায়ের কোলে ঈসা আ.-এর কথা
তখন মারইয়াম আলাইহাস সালাম কোলের শিশু ঈসা আলাইহিস সালামের দিকে ইশারা করলেন। কোলের শিশু ঈসা আ. তখন বলে উঠলেন,
بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ مَا دُمۡتُ حَیًّا ۪ۖ ٣١ وَّبَرًّۢا بِوَالِدَتِیۡ ۫ وَلَمۡ یَجۡعَلۡنِیۡ جَبَّارًا شَقِیًّا ٣٢ وَالسَّلٰمُ عَلَیَّ یَوۡمَ وُلِدۡتُّ وَیَوۡمَ اَمُوۡتُ وَیَوۡمَ اُبۡعَثُ حَیًّا ٣٣
আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন, ‘আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন’। ‘আর আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহঙ্কারী, অবাধ্য করেননি’। আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি(১), যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হব। (সূরা মারইয়াম, (১৯), আয়াত, ৩০-৩৪)
(তাফরিরে মাআরিফুল কোরআন, ৬ষ্ঠ-খণ্ড, ১৬, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৪-খণ্ড, ১৪১, তাফসীরে মাযহারী, ৭ম-খণ্ড, ৩৬৩)