কিয়ামতের দিন মানুষকে ‘ইমাম’সহ ডাকা হবে যে কারণে
পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরায়েলের ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
یَوۡمَ نَدۡعُوۡا کُلَّ اُنَاسٍۭ بِاِمَامِهِمۡ ۚ فَمَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ فَاُولٰٓئِکَ یَقۡرَءُوۡنَ کِتٰبَهُمۡ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ فَتِیۡلًا
‘স্মরণ করো ওই দিনের কথা, যেদিন আমি মানুষের প্রতিটি দলকে তাদের ‘ইমাম’সহ ডাকব। (সেদিন) যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে। তাদের ওপর সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না। ( সূরা বনি ইসরায়েল, (১৭), আয়াত, ৭১)
মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য ও পরিণতি
আলোচ্য আয়াতে মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য ও পরিণতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য ও পরিণতি বোঝা যাবে কিয়ামতের দিন। ওই দিন মানুষ দলে দলে আল্লাহর সামনে হাজির হবে। এক এক করে প্রতিটি দলকে তাদের ‘ইমাম’সহ ডাকা হবে। যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা পরম সৌভাগ্যবান। তারা চিরশান্তির আধার জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আয়াতে ‘ইমাম’ বলে কী বোঝানো হয়েছে
আয়াতে ‘ইমাম’ বলে কি বোঝানো হয়েছে, এ নিয়ে মুফাসসিরদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে, মুজাহিদ ও কাতাদা বলেছেন, এখানে ইমাম বা নেতা বলে বুঝানো হয়েছে, নবী-রাসূলদের। অর্থাৎ, প্রত্যেক নবীর উম্মতকে তার নবীর নামে ডাকা হবে। যেমন—হে মুসা (আ.)-এর উম্মত, হে ঈসা (আ.)-এর উম্মত, হে ইবরাহিম (আ.)-এর উম্মত, হে মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত ইত্যাদি।
ভালো-মন্দ নেতা
হজরত সাঈদ ইবনে যোবায়ের বলেছেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, এখানে ইমাম বা নেতা বলে বুঝানো হয়েছে ভালো-মন্দ সবধরনের নেতাকে। যারা মানুষকে ভালো পথে দেখায়, অথবা পথভ্রষ্ট করে। কোরআনে নেতা বলে দুই দলকেই বোঝানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
প্রত্যেক মানুষ একজন নেতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে অনুসরণ করে। কিয়ামতের দিন মানুষ তাদের সেসব নেতা বা পথনির্দেশকের সঙ্গে পুনরুত্থিত হবে। কারণ, পরকাল দুনিয়ার জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। যদি কারো আদর্শিক নেতা সত্যপন্থী হন, তাহলে তার আনুগত্যকারীও মুক্তি পাবে। আর যদি কারো নেতা বিপথগামী হন, তাহলে তার অনুসরণকারীও আজাবে নিপতিত হবে। কিয়ামতের দিন কারো ওপর বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না।
আমলনামা
হাসান ও আবুল আলিয়াসহ আরও কোনো কোনো তাফসিরবিদ মনে করেন, এখানে ‘ইমাম’ অর্থ গ্রন্থ, মানুষের কৃতকর্ম বা আমলনামা। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে যখন ডাকা হবে তখন তার আমলনামা তার সঙ্গে থাকবে এবং সে অনুযায়ী তার ফয়সালা হবে। শেষোক্ত অভিমতকেই আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইমাম বলে গ্ৰন্থ উদ্দেশ্য নেওয়ার কারণ এই যে, ভুলভ্রান্তি ও দ্বিমত দেখা দিলে গ্রন্থের আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন- কোনো বিষয়ে জটিলতা দেখা দিলে ইমাম বা নেতার আশ্রয় নিয়ে এর সমাধান করা হয়।
সৌভাগ্যবান ও হতভাগা
কিয়ামতের দিন নেককার ও সৌভাগ্যবানদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, সে (আনন্দে অন্যদের ডেকে) বলবে—নাও, তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখো। আমি জানতাম যে আমাকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হবে।’ (সূরা হাককাহ, আয়াত, ১৯-২০)
আর পাপী, অবিশ্বাসী ও হতভাগাদের আমলনামা দেওয়া হবে বাঁ হাতে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যার আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে—হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো, আর আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার (সব কিছুর) শেষ হতো।’ (সূরা হাককাহ, আয়াত, ২৫-২৭)
এনটি