মসজিদুল আকসায় মুসলিমরা নামাজ পড়ার অধিকার পেলেন যেভাবে
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদিনার শাসনভার গ্রহণের পর ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। তার সময়ে মুসলিমদের অধীনে আসে সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ। তার শাসনামলেই ফিলিস্তিনের জেরুসালেম এবং জেরুসালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিমদের হস্তগত হয়।
বায়তুল মুকাদ্দাস জয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি ও এই উম্মতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রা। সঙ্গে ছিলেন দক্ষরণকুশলী মিসর বিজেতা আমর ইবনুল আস এবং আল্লাহর তরবারী খ্যাত অপরাজেয় বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ।
মুসলিম বাহিনীর কথা শুনে কুদসবাসীর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ভয় ও আতঙ্ক। ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতিত্রয়ের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে সর্বশক্তি দিয়ে লড়লেও এক মুহূর্তের বেশি ময়দানে টিকা সম্ভব নয়। পলায়নপর সম্রাট থেকেও সাহায্য প্রাপ্তির বিন্দুমাত্র আশা নেই। গোটা শহরেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
ইসলামি যুদ্ধরীতি অনুযায়ী দূতের বার্তা এসে উপস্থিত পৌঁছেছে। ইসলাম গ্রহণ বা সন্ধির শর্ত মেনে জিযয়া (কর) প্রদানে সম্মত হওয়া কিংবা যুদ্ধ; এই তিন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কুদসবাসীকে।
আরও পড়ুন
সাধারণত সন্ধির মাধ্যমে কোনো শহর মুসলমানদের করতলগত হলে সেখানখার অমুসলিম বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কিন্তু বাইতুল মুকাদ্দাসের প্রেক্ষাপট অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় ভিন্ন। কেননা নবীদের স্মৃতিধন্য এ ভূমি, এখানের মসজিদে আকসা মুসলমানদের প্রথম কেবলা। এ ভূমির গুরুত্ব মুসলমানদের কাছেও কোনো অংশেই কম নয়।
সন্ধির মাধ্যমে শহর মুসলমানদের হস্তগত করা হলে কুদসবাসীও অন্যদের মতো সমান নিরাপত্তা পাবে কি না তা নিয়ে ছিল জনমনে সংশয়। খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা দূত মারফত খবর পাঠালো, শহরের অধিকার তারা ছেড়ে দিবে যদি স্বয়ং খলিফা এসে চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেন।
বিচক্ষণ সেনাপতি আবু উবাইদা রাযি. সম্ভাব্য সব উপায়ে পবিত্রভূমিতে রক্তপাত এড়াতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি পত্র পাঠিয়ে দুর্দণ্ড প্রতাপশালী খলিফা আমীরুল মুমিনীন ওমর রাযি. কে বায়তুল মুকাদ্দাসে আমন্ত্রণ জানালেন।
মদীনায় আলী রাযি.-কে স্থলাভিষিক্ত করে উমর রাযি. পৌঁছুলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। এবং নিম্নোক্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে বিনা রক্তপাতে পূণ্যভূমিকে মুসলমানদের করতলগত করলেন।
‘মুসলমানদের আমীর, আল্লাহর বান্দা উমরের পক্ষ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসবাসীকে এই নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে-অমুসলিমদের জান,মাল এখানে নিরাপদ। কেউ তার সামান্য ক্ষতি করবে না। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে। গির্জা বা অন্য কোনো প্রকার উপাসনালয়কে কখনো অধিগ্রহণ করা হবে না। হ্যাঁ, কোনো ইয়াহুদি বা রোমান সৈন্য এখানে অবস্থান করতে পারবে না। তারা চাইলে নিরাপদে শহর ছেড়ে যেতে পারবে।’ (সংক্ষেপিত) এই অধিকার কুদসবাসী জিযয়া (কর) প্রদানের শর্তে লাভ করবে। এই চুক্তিপত্র বাস্তবায়নের জিম্মা প্রথমত খলীফা অতপর প্রত্যেক মুসলমানের।’
এরপর মুসলমানদের জন্য পবিত্রভূমির দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজের স্মৃতিবিজড়িত মসজিদুল আকসার দাউদী মেহরাবে আমীরুল মুমিনীন ওমর রাযি. দুই রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করেন। এভাবেই মসজিদুল আকসায় প্রথমবারের মুসলমানদের নামাজ পড়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।