বৃষ্টি যেভাবে আল্লাহর রহমত নিয়ে আসে
প্রকৃতিতে সজীবতা, প্রাণ ফিরিয়ে আনে বৃষ্টি। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বৃষ্টির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। হাদিসে বৃষ্টিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি বেশি খুশি হলে তিনটি জিনিস দান করেন। সেগুলো হলো- কন্যাসন্তান, মেহমান এবং বৃষ্টি।
অনাবৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের সর্তকবার্তা। মানুষের পাপাচারের কারণে অনাবৃষ্টি হয়ে থাকে। এর কারণে আল্লাহ তায়ালা অনাবৃষ্টি দিয়ে মানুষকে সতর্ক করে থাকেন। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ যখন জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। বৃষ্টি মহান খোদার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ।
মানুষের জীবনধারনের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ। পানির লেয়ারের ভারসাম্য রক্ষায় বৃষ্টির অবদান অপরিসীম। গত ৫০ বছরে ঢাকায় পানির লেয়ার ৮৬ মিটার নেমে গেছে। দেশে বর্তমানে ৭ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি ও সাড়ে ৭ কোটি মানুষ স্যানিটেশন বঞ্চিত রয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল।
আমরা প্রতিনিয়ত পাপাচালে লিপ্ত থাকার পরও আল্লাহ তায়ালা বিশেষ রহমতে আমাদের মাতৃভূতিতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই বর্ষণের কারণেই বর্ষার সিজনে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ঠিক হয়ে যায়।
কখনো কখনো এতো বেশি বৃষ্টিপাত হয় যা আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বৃষ্টির কারণে আমাদের মাঝে কিছুটা বেজার ভাবও দেখা যায়। কিন্তু এমনটা করা উচিত নয়। কারণ, সৃষ্টির রহস্য সবসময় মানুষের অজানা। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না।, (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত, ৩৬)।
আরও পড়ুন
বৃষ্টিপাতের কমবেশিতে আল্লাহ তায়ালা কত বড় রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন তা বোঝা যায় কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের প্রতি খেয়াল করলে। বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং যিনি আকাশ থেকে পরিমাণমত পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর তা দ্বারা আমি এক মৃত ভূখণ্ডকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। এভাবেই তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে।’ (সূরা আয-যুখরুফ, (৪৩), ১১)।
আয়াতটিতে উল্লেখিত ‘পরিমাণ’ শব্দটি বৃষ্টির অনেক বৈশিষ্ট্যের সাথেই সম্পর্কযুক্ত। প্রথমত, পৃথিবীতে সবসময় একই পরিমাণে বৃষ্টি পড়ে। প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবী থেকে আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন টন পানি বাষ্পীভূত হয়ে থাকে। সংখ্যাটি প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি বর্ষিত হয়ে থাকে তার সমান। এর অর্থ দাঁড়ায়, পানি একটি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী একটি সুষম চক্রের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবাহিত হয়।
প্রখ্যাত তাফসীরকাবিদ ইবনে কাসির এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘তিনি আকাশ থেকে এমন পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে, তা জমিনের জন্যে যথেষ্ট হয়। এর ফলে ভূমি শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। এই পানি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু পান করে থাকে। এই বৃষ্টির মাধ্যমে মৃত ও শুষ্ক জমিকে সজীব করে তোলা হয়। শুষ্কতা সিক্ততায় পরিবর্তিত হয়।
জঙ্গল ও মাঠ-ময়দান সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে এবং গাছপালা ফুলে-ফলে পূর্ণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর ও সুস্বাদু ফল-মূল উৎপন্ন হয়। বৃষ্টি সংক্রান্ত আরেকটি পরিমাণ এটির পতনের গতির সাথে সম্পর্কিত।
বৃষ্টি-মেঘের সর্বনিম্ন উচ্চতা ১২০০ মিটার। এই উচ্চতা থেকে একফোঁটা বৃষ্টির সমপরিমাণ ওজন এবং আয়তনের একটি বস্তু ছোড়া হলে সেটি ক্রমাগত গতিবৃদ্ধি করবে এবং ঘণ্টায় ৫৫৮ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে। অবশ্যই এমন গতিতে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া কোনো বস্তু বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করবে।
এভাবেই যদি বৃষ্টি বর্ষণ হয় তাহলে সবধরনের চাষের জমি ধ্বংস হয়ে যাবে, আবাসিক এলাকা, ঘরবাড়ি, যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মানুষ বাইরে হাঁটাচলা করতে পারবে না। অধিকন্তু, এই হিসাবগুলো ১২০০ মিটার উপরে থাকা মেঘের জন্য, যেখানে ১০,০০০ মিটার উচ্চতায়ও বৃষ্টি-মেঘ রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই অমন উচ্চতা থেকে পড়া একফোঁটা বৃষ্টি অনেক ধ্বংসাত্মক একটি গতিতে পৌঁছাতে পারতো। কিন্তু, এটি এভাবে ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটায় না; যতো উচ্চতা থেকেই পড়ুক না কেনো, ভূমিতে পৌঁছানোর সময় বৃষ্টির গড় গতি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনটা হয়ে থাকে তাদের বিশেষ আকার গ্রহণ করার কারণে। যখন বৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট গতিসীমায় পৌঁছায় তখন এই বিশেষ আকার বায়ুমন্ডলের ঘর্ষণ প্রভাব বৃদ্ধি এবং ত্বরণ হ্রাস করে।