আকাশে মেঘ দেখলে বিশ্বনবী সা. যা করতেন
প্রচণ্ড বৃষ্টি-বাদলের আগে আকাশে মেঘ জন্মে। মেঘমালা থেকে নেমে আসা বৃষ্টিতে সিক্ত হয় পৃথিবী। প্রাণ ফিরে পায় তৃণলতা, গাছ-পালা। বৃষ্টি থেকে উপকৃত হয় মানুষ, সৃষ্টিজীব। মেঘ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ দ্বারা মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; এতে ও বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা ২ বাকারা, আয়াত, ১৬৪)
বৃষ্টির আগে আকাশে মেঘ দেখলে অনেকের মুখেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। মনে ভালো লাগা কাজ করে। তবে সবসময় বৃষ্টি রহমতের হয় না। কখনো কখনো ভারি-বৃষ্টি বিপর্যয় নিয়ে আসে জনজীবনে। আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে পাঠানো হয় বৃষ্টি। তাই আকাশে মেঘ দেখলেই খুশি হতেন না মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত নাকি সতর্কবার্তা তা ভেবে অস্থিরতা কাজ করতো তার মাঝে।
এ বিষয়ে এক হাদিসে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে মেঘ দেখতেন, তখন একবার সামনে এগোতেন, আবার পেছনে সরে যেতেন। কখনো ঘরে প্রবেশ করতেন, আবার বেরিয়ে যেতেন। এ সময় তারমুখমণ্ডল মলিন হয়ে যেত। পরে যখন আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করত তখন তার এই অস্থিরতা দূর হয়ে যেতো।
আকাশে মেঘ দেখে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন অস্থিরতা এবং বৃষ্টি নামার পর তার স্বাভাবিক অবস্থা দেখে আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা জিগেস করলেন, মানুষ মেঘ দেখে আনন্দিত হয় যে, বৃষ্টি হবে। কিন্তু এর বিপরীত আপনার মুখমন্ডলে চিন্তা ও অস্থিরতার ভাব দেখা যায়, এর কারণ কী?
তিনি বললেন, ‘আয়েশা! এই মেঘে যে আজাব নেই তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? এক জাতিকে তো বাতাসের আজাবের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তারাও তো মেঘ দেখে বলেছিল, এই মেঘ আমাদের উপর বৃষ্টি বষর্ণ করবে।’ (সূরা আহকাফ, (৪৬), আয়াত, ২৪, বুখারি, ৫/৩২০৬, মুসলিম, ৩/ ৮৯৯)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার জবাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আহকাফের ২৪ নম্বর আয়াত তিলাওয়াতের কারণ হলো, আদ জাতির ওপর বৃষ্টি রহমতের পরিবর্তে শাস্তি হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলো তা বর্ণনা করা।
আরও পড়ুন
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী আদ জাতির ওপর অবতীর্ণ বৃষ্টি তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ ছিলো। তাদের ঘটনার বিবরণ হলো-
আদ জাতি ছিল মূর্তিপূজারী। মূর্তিপূজাসহ তারা আরো নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। হজরত হুদ আলাইহিস সালাম তাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে আল্লাহর একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং সব ধরনের অত্যাচার-উত্পীড়ন বর্জন করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা নিজেদের ধনৈশ্বর্যের মোহে নিমজ্জিত হয়ে তাঁর (হুদ আলাইহস সালাম) আদেশ অমান্য করে।
হজরত হুদ আলাইহিস সালামের কথা অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা আদ জাতিকে ধ্বংস করে দেন। তাদের প্রতি প্রথম আজাব ছিল অনাবৃষ্টি। তিন বছর তাদের এলাকায় বৃষ্টি বন্ধ ছিল।
এতে তাদের সব ফসল জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ফলে দেশে অভাব দেখা দেয়। এরপরও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। তারপর আট দিন সাত রাত তাদের ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এতে তাদের বাড়ি-ঘর, বাগ-বাগিচা, জীবজন্তু সব ধ্বংস হয়ে যায়। তারা নিজেরাও শূন্যে উড়তে থাকে। রাতে তারা মরে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ رِجۡسٌ وَّ غَضَبٌ ؕ اَتُجَادِلُوۡنَنِیۡ فِیۡۤ اَسۡمَآءٍ سَمَّیۡتُمُوۡهَاۤ اَنۡتُمۡ وَ اٰبَآؤُکُمۡ مَّا نَزَّلَ اللّٰهُ بِهَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ ؕ فَانۡتَظِرُوۡۤا اِنِّیۡ مَعَکُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِیۡنَ
‘(হুদ) বলল, ‘তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের উপর নির্ধারিত হয়েই আছে, তবে কি তোমরা আমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও এমন কতকগুলি নাম সম্বন্ধে, যার নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছে এবং সে সম্বন্ধে আল্লাহ কোনো সনদ (স্বীকৃতি) পাঠাননি? সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করছি।’ (সূরা আরাফ, আয়াত, ৭১)
তাই আকাশে মেঘ দেখেই খুশি হতেন না নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মেঘ দেখে প্রথমেই তার মনে হতো এই বৃষ্টি শাস্তির নাকি রহমতের। বৃষ্টি নামার পর যখন তিনি দেখতেন এ বৃষ্টি স্বাভাবিক তখন তার অস্থিরতা দূর হতো। এ কারণে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে কল্যাণের দোয়া করা উচিত সবার।
এনটি