বিয়ে না করে একা থাকলে গুনাহ হবে?
বিয়ের মাধ্যমে জীবনে পূর্ণতা আসে। দ্বীন এবং ঈমানে পরিপক্কতা অর্জন হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস, ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস, ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস, ২৭২৮)
স্বাভাবিক নিয়মে নির্ধারিত বয়সে, অনেক সময় পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেকে নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে আরেকটু দেরিতে বিয়ে করেন।
তবে বর্তমান সমাজে বিয়ে নিয়ে অনেকের মানসিকতা প্রচলিত ধারার বাইরে। কেউ কেউ বিয়ে না করে একাকী জীবন উপভোগের কথা বলে থাকেন। বিয়ে না করে একা থাকা অনেকের কাছে ফ্যাশন হিসেবেও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।
তবে ইসলাম এমন চিন্তাধারাকে অনুৎসাহিত করে। কারণ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়েকে তার সুন্নত অভিহিত করে বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার উম্মত নয়।
এ বিষয়ে হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল।
যখন তাদেরকে নবীজির আমল সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ’ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তার আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না।
অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, ’তোমরা কি ওই সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তার প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, হাদিস, ১৪০১, আহমাদ, হাদিস, ১৩৫৩৪)
এই হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, মানুষ মানুষের স্তরেই থাকতে পারবে না। মানুষ অতিরিক্ত খাবার খেলে বা একেবারেই খাবার না খেলে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিবে। একাধারে রোজা পালন করলেও একই অবস্থা দেখা দিবে। তাই আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
তাই বিয়ে করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত, আর বিয়ে না করার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত ছাড়ার গুনাহ হবে।
এনটি