রমজানে যে ১০ আমলে বিপুল সওয়াব
রমজান মাস পুরো বছরের সবচেয়ে বরকতময় সময়। এই মাসের আমলেও আল্লাহ তাআলা দিগুণ সওয়াব দান করেন। পবিত্র এই মাসে সাহরি, ইফতার ও তারাবিসহ কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। তবে এসব ছাড়াও আরও প্রচুর আমল রয়েছে, যেগুলো বছরের অন্য সময়ের মতো রমজানেও করা যায়। এতে বিপুল সওয়াব অর্জিত হয়। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ হয়।
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো উচিত। এটা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক। এজন্য সর্বোতভাবে প্রচেষ্টা থাকা উচিত। ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য আমরা ‘রমজানে সহজে যেসব আমল করা যায়’ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরছি।
এক. অধিক হারে দোয়া
মহান আল্লাহ রোজার বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো কাছেই আছি। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দিই।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৬) তাই রোজা পালনকারীর আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া করা জরুরি।
দুই. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে রমজান মাসে ইমান ও সওয়াবের আশায় (ইবাদতের মাধ্যমে) রাত জাগরণ করবে, তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৩)
তিন. দান-সদকা ও সহযোগিতা
অন্যকে সহযোগিতা করা ও দান-সদকায় মগ্ন হওয়া রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরও বেড়ে যেত। (মুসলিম, হাদিস : ৩২০৮)
চার. কোরআন তেলাওয়াত-অনুবাদ
রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিম ও মুমিনের ওপর আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে...।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)
পাচ. তাওবা ও ইস্তিগফার
সর্বদা তাওবা করা ওয়াজিব। আর বিশেষত এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তাওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাই আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল, হাদিস : ১৪১০)
ছয়. মিসওয়াক করা
মিসওয়াকের প্রতি রাসুল (সা.) সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘মিসওয়াক মুখে পবিত্রতা দানকারী এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।’ (ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস : ১৩৫)
সাত. ইফতার করানো
রমজানে বা রমজানের বাইরে রোজাদারকে ইফতার করালে রোজার সমান সওয়াব। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩০২)
আট. পরস্পর কোরআন শোনানো
রমজান মাসে একজন অন্যকে কোরআন শোনানো উত্তম আমল। এভাবে কোরআন শোনানোকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের রাতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০২)
নয়. শবে কদর তালাশ করা
রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সবার উচিত ওই রাতের সন্ধান করা। ওই রাত সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা হলো, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ৪)
দশ. সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ পালন
এ মাসে একটি ওমরাহ পালন করলে একটি হজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সঙ্গে হজ আদায় করার সমতুল্য।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৩)