কাউকে অন্যায় কিছু করতে দেখলে যা করবেন
কোথাও অন্যায় হতে দেখলে তার প্রতিবাদ করা জরুরি। কারণ, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা অন্যায় কাজে বাঁধা দেয় না তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। এবং দুনিয়াতেও আল্লাহর আজাবের মুখোমুখি হবে তারা।
এ সম্পর্কে হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন জাতির মধ্যে কোন ব্যক্তি কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় এবং ওই জাতির মধ্যে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে সেই গুনাহ থেকে বাঁধা না দেয় তবে মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই তাদের উপর আল্লাহর আজাব নাজিল হয়। (আবু দাউদ, ইবনে মাজা, ইবনে হিব্বান।)
হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কালিমায়ে তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তার পাঠকারীকে সব সময় উপকার করতে থাকে এবং তার উপর হতে আজাব ও বালা-মুসিবত দূর করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত এর হকের অবমাননা না করা হয়। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, কালিমায়ে তাওহীদের হকের অবমাননা করার অর্থ কি? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানী করা হয় আর তা বন্ধ করার জন্য কোন চেষ্টা করা হয় না। (তারগীব)
অন্যায়ের প্রতিবাদ মুমিন ব্যক্তি কখন কিভাবে করবে তার নির্দেশনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় দেখলে সে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে, যদি সে তাতে সক্ষম না হয়, তবে সে যেন মুখে প্রতিবাদ করে; আর যদি সে তাতেও সক্ষম না হয়, তবে মনে মনে তা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। এটাই ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯)
অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার কারণে যখন শাস্তি নাযিল হবে তখন দোয়া করলেও সে শাস্তি থেকে বাঁচার কোন পথ নেই। এ সম্পর্কে হযরত হুযাইফা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে বাধা দিবে। তা না হলে অচিরেই আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের ওপর কঠিন শাস্তি নেমে আসবে। তখন তোমরা (সে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য) দোয়া করবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না। (তিরমিজি)
ইমাম গাজালি (রহ.)-এর মতে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্রমবিন্যাস রয়েছে। তা হলো—১. অন্যায়ের পরিচয় তুলে ধরা এবং সচেতন করা, ২. আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি ও পুরস্কারের বর্ণনা দেওয়া, ৩. ধমক ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা, ৪. সশরীরে বাধা দেওয়া, ৫. আঘাত করা, ৬. অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযান পরিচালনা করা। (ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন : ২/৩২৯-৩৩৩)
এনটি