সূরা আসর যে শিক্ষা দেয়
সূরা আসর পবিত্র কোরআনের একটি ছোট সূরা। কিন্তু এই সূরাটি এতোটাই অর্থপূর্ণ সূরা যে, ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন, মানুষ এ সূরাটিকেই চিন্তা ভাবনা করে পাঠ করলে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে সংশোধনের জন্য যথেষ্ট হযে যায়। সূরায় আল্লাহ তায়ালা সময়ের শপথ করে বলেছেন, মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্ত, তবে ক্ষতি থেকে তারাই মুক্ত যারা চারটি বিষয় নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে।
এ বিষয়গুলোর প্রথমটি হলো- আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান।
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে স্বীকৃতি দেওয়া। আর শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং কাজকর্মে বাস্তবায়ন। (মাজমু ফাতাওয়া ৭/৬৩৮)
ঈমানের পরে মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচবার জন্য দ্বিতীয় যে গুণটি অপরিহার্য সেটি হচ্ছে সৎকাজ। কোরআনের পরিভাষায় একে বলা হয় আমালে সালেহা। সব ধরনের সৎকাজ এর অন্তর্ভুক্ত। কোনো ধরনের সৎকাজ এর বাইরে থাকে না।
কিন্তু কোরআনের দৃষ্টিতে যে কাজের মূলে ঈমান নেই এবং যা আল্লাহ ও তার রাসূল প্রদত্ত হেদায়াতের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়নি তা কখনো সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই কোরআন মাজীদের সর্বত্র সৎকাজের আগে ঈমানের কথা বলা হয়েছে এবং এই সূরায়ও ঈমানের পরেই এর কথা বলা হয়েছে।
সৎকাজের পর ক্ষতি থেকে বাঁচবার জন্য তৃতীয় গুণটি হচ্ছে- অন্যকে হক বা সত্যের প্রতি উপদেশ দেওয়া।
ইবনে আব্বাস রা.-এর মতে, অন্যকে হক বা সত্যের প্রতি উপদেশ দেওয়া অর্থ হলো- ঈমান ও তাওহীদের দিকে আহ্বান করা। (বাগভী; কুরতুবী)
কাতাদা রহ. বলেন, অন্যকে হক বা সত্যের প্রতি উপদেশ দেওয়া অর্থ হলো -কোরআনের প্রতি আহ্বান করা। (কুরতুবী)
সুদ্দী বলেন, এখানে হক বলে আল্লাহকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। (কুরতুবী)
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এখানে হক বলে শরীয়ত নির্দেশিত কাজগুলো করা এবং শরীয়ত নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিত্যাগ করা বোঝানো হয়েছে। (ইবন কাসীর)
কারও কারও মতে, হক বলে এমন কাজ বোঝানো হয়েছে যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আর তা হচ্ছে যাবতীয় কল্যাণমূলক কাজ। সেটা তাওহীদ, শরীয়তের আনুগত্য, আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের অনুসরণ, দুনিয়াবিমুখ ও আখেরাতমুখী হওয়া সবই বোঝায়। (কাশশাফ)
মূলত, হকের আদেশের প্রতি আসিয়ত করার বিষয়টি ওয়াজিব হক ও নফল হক উভয়টিকেই শামিল করে। (আত-তিবইয়ান ফী আকসামিল কোরআন ৮৩–৮৮)
সত্যের প্রতি উপদেশ দেওয়ার পর ক্ষতি থেকে বাঁচবার চতুর্থ গুণটি হলো সবর বা ধৈর্য।
সবর’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিজেকে বাধা দেয়া ও অনুবর্তী করা। এখানে কয়েকটি অর্থ হতে পারে।
১. যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা। ২. সৎকাজ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। ৩. বিপদাপদে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। (মাদারেজুস সালেকীন। ২/১৫৬)
সুতরাং সৎকর্ম সম্পাদন, গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা এবং এ জাতীয় বিপদাপদ মোকাবেলা করা সবই ‘সবর’ এর শামিল। সুতরাং আয়াতের অর্থ হচ্ছে, হকের নসিহত করার সাথে সাথে দ্বিতীয় যে জিনিসটি ঈমানদারগণকে ও তাদের সমাজকে ক্ষতি থেকে বাঁচাবে তা হচ্ছে এই যে, এই সমাজের সবাই পরস্পরকে সবর বা ধৈর্যধারণের উপদেশ দিতে থাকবে।
এনটি