কোরআনে ভালো বন্ধু সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
জীবনের ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বন্ধু, বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো।
নবীজি (স.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)
বন্ধু ছাড়া জীবনের পথ চলা কঠিন তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো বন্ধু নির্বাচনের কথা বলেছেন। ভালো এবং খারাপ বন্ধুর পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হলো কস্তূরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও কামারের হাপরের মতো। মৃগ কস্তূরী বহনকারী হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে বা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি লাভ করবে সুবাস। আর কামারের হাপর তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে পাবে দুর্গন্ধ।’ (বুখারি: ৫১৩৬)
বন্ধূ নির্বাচনে কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এখানে কোরআনের নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হলো-
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী। -(সূরা আত তওবা: ৭১)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৮)
পবিত্র কোরআনে আল্লা হ্তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ -সুরা কাহাফ : ২৮
কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)
কারণ, পাপাচারী ওকাফেরদের বন্ধুত্ব শুধু কুফরী ও পাপাচারের ভিত্তিতে হয় এবং এই কুফরী ও পাপাচারই তাদের আজাবের কারণ হবে। আর এরই কারণে তারা একে অপরকে দোষারোপ করবে এবং পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে ঈমানদার ও আল্লাহভীরু লোকদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ভিত্তিতে হয়, আর এই দ্বীন ও ঈমানই হল কল্যাণ ও সওয়াব লাভের মাধ্যম, সেহেতু তাঁদের এই বন্ধুত্বে কোন বিচ্ছেদ ঘটবে না। আখেরাতেও তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে, যেমন দুনিয়াতে ছিল।
এনটি