আল্লাহ তায়ালার যে দানে সন্তুষ্ট হবেন বিশ্বনবী
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওহী আসতে বিলম্ব হচ্ছিলো, তা দেখে মুশরিকরা বলতে শুরু করে যে, মুহাম্মদকে তার আল্লাহ পরিত্যাগ করেছেন ও তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা সূরা আদ-দুহা অবতীর্ণ করেন এবং কাফেরদের এমন ভিত্তিহীন ধারণার জবাব দেন। (মুসলিম: ১৭৯৭)
এ সূরা তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مَا وَدَّعَکَ رَبُّکَ وَ مَا قَلٰی
আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি। (সূরা দোহা, (৯৩) আয়াত, ৩, পারা, ৩০)
এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন,
وَ لَسَوۡفَ یُعۡطِیۡکَ رَبُّکَ فَتَرۡضٰی
শীঘ্রই আপনার পালনকর্তা আপনাকে (এত নিয়ামত) দিবেন যার ফলে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। (সূরা দোহা, (৯৩) আয়াত, ৫, পারা, ৩০)
অথার্ৎ, মুশরিকরা আপনার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এর অসারতা তারা অবশ্যই পৃথিবীতে দেখে যাবে। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি আপনাকে পরকালে দুনিয়ার থেকেও অনেক বেশি নিয়ামত দানের প্রতিশ্রুতি করছি।
আল্লাহ তায়ালা আসলে নবীজিকে কি দিবেন, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি এখানে। তবে এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নবীজির প্রত্যেক প্রত্যাশার বস্তুই প্রচুর পরিমাণে দেবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাম্যবস্তুগুলো ছিল মূলত ইসলামের ও কোরআনের উন্নতি, সারা বিশ্বে হিদায়াতের প্রসার, শত্রুর বিরুদ্ধে তার বিজয়লাভ, শত্রুদেশে ইসলামের কালেমা সমুন্নত করা ইত্যাদি। আর তার মৃত্যুর পর হাশরের ময়দানে ও জান্নাতেও তাকে আল্লাহ তাআলা অনেক অনুগ্রহ দান করবেন। (বাদা’ইউত তাফসীর)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, পরবর্তীকালে যে সমস্ত জনপদ বিজিত হবে তা একটি একটি করে পেশ করা হচ্ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে। এতে তিনি খুশী হলেন, তখন আল্লাহ তাআলা বলেন যে, ‘অচিরেই আপনার রব আপনাকে এমন দান করবেন যে আপনি সস্তুষ্ট হয়ে যাবেন’। (মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫২৬)
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এ আয়াত নাজিল হলে,
-(কুরতুবী)
হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মত সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করবেন এবং অবশেষে তিনি বলবেন, হে মুহাম্মদ, এখন আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন কি? আমি বলবো, হে আমার পরওয়ারদিগার, আমি সন্তুষ্ট।
সহীহ মুসলিমের রেওয়ায়েতে হজরত হজরত আমর ইবনে আস রা. বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ইবরাহিম আ.- সম্পর্কিত এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন,
فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
যারা আমাকে অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেক্ষেত্রে তুমি তো বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। ( সূরা ইবরাহিম, (১৪) আয়াত, ৩৬, পারা, ১৩)
এরপর হজরত ঈসা আ.-এর উক্তি সম্বলিত অপর একটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন,
إن تعذبهم فإنهم عبادك وإن تغفر لهم فإنك أنت العزيز الحكيم
আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তে আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা মায়েদা, (৫) আয়াত, ১১৮, পারা, ৬)
এরপর তিনি দুহাত তুলে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বারবার বলতে লাগলেন,
للهم أمتي ، اللهم أمتي ، اللهم أمتي
হে আল্লাহ আমার উম্মত, আমার উম্মত, আমার উম্মত।
আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আ.-কে কান্নার কারণ জিগেস করতে পাঠালেন (এবং বললেন, অবশ্য আমি সব জানি)। জিবরাঈল আ.-কে নবীজি বললেন, আমি আমার উম্মতের মাগফিরাত চাই। আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আ.-কে বললেন, যাও গিয়ে বল যে, আল্লাহ তায়ালা উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করবেন এবং আপনাকে দুঃখিত করবেন না। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, ৮০৩)
এনটি