জান্নাতিদের কাছে যে মিনতি জানাবে জাহান্নামিরা
কিয়ামত দিবসে হিসাব নিকাশ শেষ হবার পর বিশ্বাসী এবং নেককার বান্দারা চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হবেন। আর অবিশ্বাসী কাফেরেরা চিরস্থায়ী কষ্ট ও অমোচনীয় কষ্টের মাঝে দিন যাপন করতে থাকবে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
‘সে দিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হবে, যাদের মুখ কালো হবে, (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পরও কুফরী করেছিলে? কাজেই নিজেদের কুফরীর জন্য শাস্তি ভোগ করতে থাক। যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে, তারা তাতে চিরকাল থাকবে।’ -(সূরা আল ইমরান, (৩) আয়াত, ১০৬-১০৭)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সুতরাং কী অবস্থা হবে? যখন আমি তাদেরকে এমন দিনে সমবেত করব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। আর প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান পূর্ণভাবে দেয়া হবে এবং তাদেরকে জুলুম করা হবে না।’ -(সুরা আল ইমরান, (৩), আয়াত, ২৫)
কিয়ামত দিবসে হিসাব নিকাশ শেষ হবার পর জাহান্নামে প্রবেশের পর জাহান্নামীরা দীর্ঘদিন ধরে কাঁদবে। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। এরপর তাদের চোখ থেকে পানির বদলে রক্ত বের হতে শুরু করবে।
তাদের এমন দুরাবস্থা দেখে জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ফেরেশতারা বলবেন, ‘হতভাগার দল! দুনিয়াতে তোমরা আল্লাহকে ডাকোনি, তার ইবাদত করোনি, পরকালের ভয়ে কান্নাকাটি করোনি, আজ কিসের জন্য কান্নাকাটি করছো, কার কাছে দুর্দশা থেকে মুক্তির আবেদন করছো? তোমাদের আহাজারি আর ফরিয়াদ শোনার মতো এখন আর কেউ নেই’।
ফেরেশতাদের এমন কথা শোনার পর জাহান্নামীরা তাদের জান্নাতবাসী আত্মীয়-স্বজনদের (বাবা-মা, সন্তানসন্ততিদের) ডাকবে এবং বলবে- ‘আমরা কবর থেকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বের হয়েছি। হাশরের ময়দানেও আমরা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত পিপাসিত ছিলাম, এক ফোঁটা পানি পাইনি, তোমরা আমাদের ওপর একটু সদয় হও, তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে দেওয়া পানি, নেয়ামত ও খাবার থেকে সামান্য কিছু অথবা এর ছিটেফোঁটা হলেও আমাদের দিকে নিক্ষেপ করো (আমরা বড় ক্ষুর্ধাত)।
পবিত্র কোরআনে জাহান্নামীদের মিনতির বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
وَ نَادٰۤی اَصۡحٰبُ النَّارِ اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ اَنۡ اَفِیۡضُوۡا عَلَیۡنَا مِنَ الۡمَآءِ اَوۡ مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰهُ
জাহান্নামীরা জান্নাতীদের ডেকে বলবে, ‘আমাদেরকে কিছু পানি ঢেলে দাও কিংবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন তাত্থেকে কিছু দাও।’ (সুরা আরাফ,(৭) আয়াত, ৫০)
(৪০ দিন, ৪০ মাস অথবা ৪০ বছর) যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নামীরা এভাবে জান্নাতিদের কাছে মিনতি জানাতে থাকবে কিন্তু তাদের কোনও জবাব দেওয়া হবে না। অবশেষে তাদেরকে জান্নাতিদের পক্ষ থেকে এই জবাব দেওয়া হবে যে, আমরা তোমাদেরকে কোনও কিছু দান করতে সম্পূর্ণ অক্ষম। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের জন্য বেহেশতের দানাপানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
জান্নাতিদের এই জবাবের বিষয়টি কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ حَرَّمَهُمَا عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ
তারা বলবে, ‘আল্লাহ এ দু’টো কাফিরদের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।’ (সুরা আরাফ,(৭) আয়াত, ৫০)
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাসির রহ. আরও লিখেছেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে জিগেস করা হলো যে, কোন জিনিস সদকা করা উত্তম? তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সব থেকে উত্তম দান হলো পানি। জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীর কাছে পানির জন্য আবেদন করবে।
বর্ণিত হয়েছে, আবু তালেব যখন মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন কুরাইশ গোত্রের কিছু লোক তাকে বললেন, তোমার ভাতিজার মাধ্যমে অনুরোধ করো যেন তিনি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য বেহেশতের আঙ্গুর পাঠিয়ে দেন।
আবু তালেবের পক্ষ থেকে একজন লোক নবীজির কাছে গিয়ে এই কথা জানালেন, এ সময় হজরত আবু বকর রা. উপস্থিত ছিলেন। এই কথা শুনে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের পানাহারের বস্তু অবিশ্বাসীদের (কাফের) জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
(তাফসিরে জালালাইন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৩৯৪-৩৯৬, তাফসিরে ইবনে কাসির, ৯/ ৬২, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৫০৬)