হজের পর যা করবেন
হজ সফরের পূর্ণ সময়টা মূলত মানুষের জীবনে তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের এক মোক্ষম সময়। এ স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে একজন মানুষ নিজেকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলে। তাই হজ থেকে ফিরেও যেন সেই তাকওয়া অটুট থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক।
হাজিদের জন্য আবশ্যক হলো ভবিষ্যতে গুনাহ পরিত্যাগ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কারণ, হজ কবুল হওয়ার নিদর্শন হলো, এর ফলে জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বিরত থাকার আগ্রহ বাড়ে। আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি মানুষ যত্নবান হয়। হজ করার পর যার জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি, তার হজ কবুল হওয়ার বিষয়টি সন্দেহমুক্ত নয়। (আপকে মাসায়েল: ৪/২৫)
যারা হজের শিক্ষা লাভে ধন্য হন, তারাই প্রকৃত হাজি। হজ ইবাদত, এটি কোনো সার্টিফিকেট কোর্স বা পদ–পদবি নয়। হজ করার পর নিজ থেকেই নামের সঙ্গে হাজি বিশেষণ যোগ করা সমীচীন নয়।
হজের পরে হাজীদের কাজে–কর্মে, আমলে–আখলাকে, চিন্তাচেতনায় পরিশুদ্ধি অর্জন করা বা পূর্বাপেক্ষা উন্নতি লাভ করতে হবে। হজ করা বড় কথা নয়; জীবনব্যাপী হজ ধারণ করাই আসল সার্থকতা।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হজ ও ওমরার জন্য গমনকারীরা আল্লাহ তাআলার বিশেষ মেহমান। তাঁদের দোয়া কবুল হয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথের যোদ্ধা, হজ ও ওমরা পালনকারী আল্লাহর অতিথি। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন এবং তারা তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। তাই তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি তাদের তা প্রদান করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩)
সুতরাং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের সাথে জীবন পরিচালনা করতে হবে প্রত্যেক হাজীকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তার প্রতিপালক তাকে বললেন, আনুগত্যে নতশির হও, তখন সে (সঙ্গে সঙ্গে) বলল, আমি রাব্বুল আলামিনের (প্রতিটি হুকুমের) সামনে মাথা নত করলাম। (সুরা বাকারা: ১৩১)
এছাড়া হজ থেকে ফিরে এসে নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি শরিফ)
হাজিদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুসাফাহা, কোলাকুলি করা ও তাঁদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব।
কিন্তু ফুলের মালা দেওয়া, তাঁদের সম্মানার্থে স্লোগান ইত্যাদি দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (আপকে মাসায়েল : ১/১৬২)
জমজমের পানি অন্য শহরে নিয়ে গিয়ে লোকদের পান করানো মুস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। (মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ : ৩০৩)
আয়েশা (রা.) জমজমের পানি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসুল (সা.) জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৫)
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে হাদিয়া-তোফা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু মনের আগ্রহ ছাড়া শুধু প্রথা পালনের জন্য কোনো কাজ করা শরিয়তসম্মত নয়। হাজিদের হাদিয়া দেওয়া ও তাঁদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটা নামের জন্য বা চক্ষুলজ্জার কারণে দেওয়া হয়। তাই তা বর্জন করা উচিত। (আপকে মাসায়েল : ৪/১৬১)
এনটি