কোরবানির সামাজিক গুরুত্ব
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি হলো আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের মাঝে সংঘটিত হওয়া কোরবানি। এখান থেকেই কোরবানির প্রথম প্রচলন শুরু হয়। তবে পবিত্র ইসলামে আমরা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মরণে কোরবানি করে থাকি।
এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, কতিপয় সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোরবানি কী? হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) বললেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবারা বললেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। (ইবনে মাজাহ-৩১২৭)।
কোরবানির গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইবরাহিম! স্বপ্নে দেওয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সু¯পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম’। (সূরা সাফফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৭)।
ধর্মীয় বিধান পালনের পাশাপাশি কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রেরণা তৈরি হয়। একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করা ও কোরবানির গোশত গরিব-দুঃখী ও আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর মাঝে বণ্টনের মাধ্যমে তৈরি হয় সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহাবস্থান ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার মানসিকতা।
আর ইসলাম বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় দেয় না বরং নির্দেশ দেয় ঐক্যবদ্ধতার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৩)। প্রতি বছর এই মহান শিক্ষার কথাই যেন কুরবানি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
কোরবানিতে গরিব মানুষের অনেক উপকার হয়। যারা বছরে একবারও গোশত খেতে পারে না, তারাও গোশত খাওয়ার সুযোগ পায়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা যায়। কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে পশু পালনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কোরবানির চামড়ার টাকা গরিবের মধ্যে বণ্টন করার মাধ্যমে গরিব-দুঃখী মানুষের নিত্যদিনের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। অপরদিকে কোরবানির পশুর চামড়া অর্থনীতিতে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।
এনটি