আল্লাহর প্রিয় হওয়ার ৫ উপায়
প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার চেষ্টা করা। যেসব গুণাবলি অর্জন করলে মহান আল্লাহ খুশি ও সন্তুষ্ট হন সেসব গুণে নিজেকে সাজানো।জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব ধরনের পাপের কাজ আল্লাহর ভয়ে পরিত্যাগ করা। এ জাতীয় গুণে গুণান্বিত মানুষ আল্লাহর প্রিয় হয়। আল্লাহর প্রিয় হওয়া মানে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা।
আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে চাইলে পাঁচটি বিষয় মেনে চলতে হবে । বিষয়গুলো হলো-
কোনও আল্লাহওয়ালার সোহবত (সান্নিধ্য ও সম্পর্ক) গ্রহণ করা
সৎ মানুষের সোহবতে থাকলে স্বর্গের সন্ধান পাওয়া যায়। ভালো মানুষের কাছে স্বর্গের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। সোহবত সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সত্যবাদীদের সাথী হও। ’ -সূরা তওবা : ১১৯
কোরআন মানুষকে সৎ ও সুন্দর মনের মানুষের সঙ্গে উঠা বসা চলাফেরা করার জন্য তাগিদ দিয়েছে। নবী-রাসূল, অলি-আউলিয়া, আলেম-উলামাদের পথ হলো সত্য ও সুন্দর। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেজদাকরীর অন্তর্ভুক্ত হও। ’ -সূরা হিজর: ৯৮
সৎ মানুষের সোহবতে মানুষ জান্নাতি হয়ে যায়। বিপদগামী মানুষ হেদায়েত পায়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরস্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ো না। ’ -সূরা মায়েদা: ২
হজরত মাওলনা জালাল উদ্দিন রূমি (রহ.) বলেছেন, ‘একটু সময় কামেল অলি-আউলিয়াদের মজলিসে বসলে হাজার বছরের ইবাদতের চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
নিয়মিত আল্লাহর জিকির করা
আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের সব সময় বেশি বেশি জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর। এখানে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা বলতে জিকিরকে উদ্দেশ করা হয়েছে। (সূরা আহজাব : ৪১-৪২)।
আল্লাহর প্রিয় হতে চাইলে সবসময় আল্লাহর জিকির করতে হবে দাঁড়িয়ে, বসে এমনকি শুয়ে যেভাবে পারা যায়, আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। যেমন-আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টি বিষয়ে (তারা বলে) হে পরওয়ারদিগার! এসব নিয়ে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। (সূরা আলে ইমরান : ১৯১)।
গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সবসময় চেষ্টা করা
চলাফেরায় সবসময় মানুষের গুনাহ হয়ে যায়। প্রবৃত্তির তাড়নায় কোনো গুনাহের কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে দ্রুত তা থেকে ফিরে আসা। কারণ আমাদের সমাজে সাধারণত চলতে গেলে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের গুনাহের সম্মুখীন হতে হয়। তাই আমরা যদি এসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চাই তবে আমাদেরকে গুনাহের পথসমূহকে বন্ধ করে দিতে হবে।
পাপ এবং গুনাহের উপকরণ থেকে দূরে থাকা
পাপ এবং গুনাহের উপকরণ যেমন সিনেমা, নাটক, বিভিন্ন অশ্লীল সাইট ইত্যাদি দেখা, গান-বাদ্য শোনা বা অশ্লীল গল্প, উপন্যাস পড়া থেকে দূরে থাকাও গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার উপায়। কারণ অশ্লীলতা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি ও কুকর্মের দিকে ধাবিত করে। অনুরূপভাবে যে সব উপকরণ হাতের কাছে থাকার কারণে মন গুনাহের দিকে ধাবিত হয় সেসব উপকরণ থেকে দূরে থাকাও জরুরি।
সুন্নত পালন এবং সুন্নত পদ্ধতীতে জীবনযাপন করা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে নয়; যে অস্বীকার করবে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
এনটি