প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হয় যেভাবে
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। বর্তমান পৃথিবীতে দুই শ কোটির বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দাবি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে ইসলাম হবে পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম। ইসলামের সূচনাকালের প্রায় দেড় হাজার বছর পরের পৃথিবীতে মুসলিমদের ধর্মপালন যতটা নির্বিঘ্ন শুরুর দিনগুলোতে এই চিত্র মোটেও এমন ছিলো না।
ধর্ম হিসেবে ইসলাম পৃথিবীতে আবির্ভাবের তিন বছর পর্যন্ত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। এই সময়ে পরস্পর সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে মুমিনদের একটি দল সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ প্রকাশ্যে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এক আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে তাঁর পরিবার-পরিজনকে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করুন আর যারা আপনার অনুসরণ করে সেসব মুমিনের প্রতি বিনয়ী হোন।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২১৪-১৫)
অন্য সর্ব সাধারণকে ইসলামের পথে আহ্বানের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘অতএব আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা প্রকাশে প্রচার করুন এবং মুশরিকদের উপেক্ষা করুন।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৯৪)
কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বপ্রথম তার পরিবারের লোকদের ইসলামের পথে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যে প্রিয় ফুফু সাফিয়া, হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানেরা, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচার চিন্তা করো। কেননা আল্লাহর দরবারে সেদিন আমার কিছু করার থাকবে না।’ (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৩/৭৭)
এরপর নবী (সা.) বনু হাশিমের সদস্যদের একত্র করেন। রাসুলের আহ্বানে আবু তালিব, আবু লাহাব, আব্বাস (রা.) ও হামজা (রা.)-সহ ৪০-৪৫ জন একত্র হন। তিনি তাঁদের গোশত, রুটি ও দুধ দিয়ে আপ্যায়ন করেন। অতঃপর তিনি তাঁদের সম্বোধন করে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের কাছে কখনো ভুল কথা বলে না। ওই আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আমি সবার জন্য সামগ্রিকভাবে এবং আপনাদের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।’ নবীজি (সা.)-এর কথা শুনে আবু তালিব উৎসাহব্যঞ্জক উত্তর দেন। কিন্তু আবু লাহাব প্রতিবাদ ও অহংকারমূলক কথা বলে। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/২৯৪)
তৃতীয় পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাফা পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করেন এবং ‘ইয়া সাবাহ’ বলে আওয়াজ দেন। আরবরা এভাবে স্বগোত্রীয়দের শত্রুদের ব্যাপারে সতর্ক করত। তাঁর ডাক শুনে কোরাইশরা সাফা পর্বতের নিচে সমবেত হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যদি আমি তোমাদের বলি এই পাহাড়ের অপর পাশে একদল শত্রু সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে এবং তোমাদের ওপর হামলা অপেক্ষা করছে, তবে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে?’ তারা সমস্বরে বলে, হ্যাঁ, বিশ্বাস করব। নবী (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের এই দুঃসংবাদ প্রদান করছি যে তোমরা যদি তোমাদের বাতিল ধর্ম-বিশ্বাস পরিহার না করো, তাহলে অচিরেই তোমাদের ওপর আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি নেমে আসবে।’ (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১২৯; সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)
এ কথা শোনার পর আবু লাহাব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘তোমার ধ্বংস হোক! এ কথা বলার জন্য তুমি আমাদের ডেকেছ?’ তার কথা শুনে সমবেতরা চলে যায়। এতে মহানবী (সা.) মনে কষ্ট পান। আল্লাহ আবু লাহাবের নিন্দায় সুরা লাহাব অবতীর্ণ করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৯৫)