কাউকে ভালো কাজের দিকে ডাকলে যে পুরস্কার
একসঙ্গে চলাফেরা, উঠাবসা করতে গিয়ে মানুষের একে অপরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে, অন্যের সঙ্গে পরিচিতির খাতিরে তার যেকোনও ডাকে, আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকেন অপরজন। অন্যের প্রতি মানুষের এই আহ্বান মন্দ কিছুর জন্য না হয়ে ভালো এবং কল্যাণের পক্ষে হওয়া আবশ্যক।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ...নেককাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সাহায্য করবে) এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। (সুরা মায়িদা, আয়াত, ০২)
ভালো কাজের প্রতিযোগিতা মানুষকে অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর ‘জান্নাতুন নাঈম’ বা চিরস্থায়ী জান্নাতের মহাসফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। অপরকে ভালো কাজের দিকে আহ্বানকারীর পুরস্কার সম্পর্কে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ ভালো কাজের দিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে; তবে তিনি ওই কাজ পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবেন।' (মুসলিম)
কোনও মুমিন বান্দা যদি তেমন কোনো ভালো কাজ করতে না পারে কিন্তু তার পরামর্শ এবং নির্দেশনায় কেউ ভালো কাজ সম্পন্ন করে তবে ভালো কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব পাবেন ওই পরামর্শদানকারী। আবার কেউ যদি অন্যায় পথের দিকে আহ্বান করে তবে সেও পাপকারীর সমপরিমাণ পাপের ভাগিদার হবে।
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যদি কোনো ব্যক্তি ভালো পথে (কাজের) আহ্বান করে; তবে যত মানুষ তার অনুসরণ করবে; তাদের সবার পুরস্কারের সমপরিমাণ পুরস্কার ওই ব্যক্তি লাভ করবে। এতে অনুসরণকারীদের পুরস্কারের ঘাটতি হবে না। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো (কাউকে) বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করে তবে যত মানুষ তার অনুসরণ করবে, তাদের সবার পাপের সমপরিমাণ পাপ সে ব্যক্তি লাভ করবে। তবে এতে অনুসরণকারীদের পাপেরও কোনো ঘাটতি হবে না।' (মুসলিম)
প্রিয় নবীজী তার কথা ও কাজের মাধ্যমে অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা উঁচু ও মহৎ কাজ এবং সৎ মানুষকে পছন্দ করেন এবং নিকৃষ্ট কাজ অপছন্দ করেন।’ (সুনানে তাবরানি, হাদিস : ২৮৯৪)
অন্যকে ভালো কাজের দিকে আহ্বান করা এই উম্মতের দায়িত্ব। কারণ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০৮)
উল্লিখিত আয়াতে ‘যারা আমার অনুসরণ করেছে’ কাদের বোঝানো হয়েছে, তা নির্ধারণে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এতে সাহাবায়ে কিরামকে বোঝানো হয়েছে, যারা রাসুল (সা.)-এর জ্ঞানের বাহক।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কিরাম এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ। তাদের অন্তর পবিত্র এবং জ্ঞান সুগভীর। তাদের মধ্যে লৌকিকতার নাম-গন্ধও নেই। আল্লাহ তাআলা তাদের স্বীয় রাসুলের সংসর্গ ও সেবার জন্য মনোনীত করেছেন। তোমরা তাদের চরিত্র অভ্যাস ও তরিকা আয়ত্ত করো। কেননা তারা সরল পথের পথিক।
কলবি ও ইবনে জায়েদ বলেন, এই আয়াত থেকে আরো জানা গেল, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের দাবি করে, তার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তাঁর দাওয়াতকে ঘরে ঘরে পৌঁছানো এবং কোরআনের শিক্ষাকে ব্যাপকতর করা। (বাগভি; কিওয়ামুস সুন্নাহ আল-ইসফাহানী, আল-হুজ্জাহ কী বায়ানিল মাহাজ্জাহ : ৪৯৮)