শরিয়তের ক্ষেত্রে আলেমদের অনুসরণ জরুরি : ফারিক নায়েক
ফারিক নায়েক। ইসলামবিষয়ক ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বখ্যাত আলোচক ডা. জাকির নায়েকের ছেলে। ফারিক মুম্বাইয়ের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড জুনিয়র কলেজে এ লেভেল (সিআইই, ইউকে) শেষ করেছেন। ১৩ বছর বয়সে স্কুলে অধ্যয়নকালে কোরআনের হাফিজ হয়েছিলেন। আট বছর বয়স থেকেই তার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন দাওয়াহ প্রোগ্রামে যেতে থাকেন। চেন্নাই, পুনে, দুবাই, ইতালি, ত্রিনিদাদ ও বিশ্বের অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষের সামনে ইংরেজি ও আরবিতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন তিনি।
২০০৩ সালে ৯ বছর বয়সে শ্রীনগরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেছিলেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামিক দাওয়াহ সম্মেলনে পনের জনেরও বেশি ইসলামিক স্পিকারের মধ্যে তিনি অনূর্ধ্ব-১৫ স্পিকার ছিলেন।
তাকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইতালি, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম বিষয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ফারিক তার পিতার পদচ্ছাপ অনুসরণ করে দাওয়াহ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কিছুদিন আগে সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ্ বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া থেকে মাস্টার্স শেষ করবেন বলে জানা গেছে।
[ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ফারিক নায়েকের সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত। প্রায় সময়ই তার সঙ্গে সালাম এবং কুশল বিনিময় হতো। মাঝেমধ্যে অল্প-স্বল্প আলাপও হতো। কিছুদিন আগে শুনলাম তিনি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া চলে যাবেন। তার কাছ থেকে একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার চিন্তাটা এসেছিল অনেক আগেই। সময়-সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সেদিন এশার নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বললাম, এশার নামাজের পর আপনার কাছ থেকে একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই। তিনি বললেন- আচ্ছা, ঠিক আছে। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। -সাঈদ হোসাইন, শিক্ষার্থী, ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব ]
সাঈদ : ভারতে আপনাদের যে দাওয়াহ কোর্স ছিল, সেটা কি মালয়েশিয়ায় চালু আছে?
ফারিক: না, তবে অনলাইনে এই কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
সাঈদ: এই কোর্সের সিলেবাস কী?
ফারিক: ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের কমন প্রশ্নগুলো এবং বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের তুলনামূলক অধ্যয়ন, অমুসলিমদের দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি।
সাঈদ: ভারতের বিখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেওবন্দ এবং নদওয়ার আলেমদের ব্যাপারে ডা. জাকির নায়েকের মন্তব্য কী?
ফারিক: তাদের অনেকের সঙ্গেই তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। আমাদের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক পিস কনফারেন্সগুলোতে দেওবন্দ এবং নদওয়ার অনেক আলেম এসেছেন। বক্তব্য পেশ করেছেন। দেওবন্দ-নদওয়ার আলেমদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। আমাদের বিরোধ হলো মুশরিক, বিদআতি ও শিয়াদের সঙ্গে।
সাঈদ: ডা. জাকির নায়েকের সঙ্গে কি বিশ্বখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল? আমরা ফেসবুকে তার সঙ্গে নদভী (রহ.)-এর একটি ছবি দেখেছি।
ফারিক: হ্যাঁ, আব্বার সঙ্গে তার একটি ছবি আছে। ইসলামের জন্য আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)-এর অনেক কর্মসাধনা আছে। একজন দাঈ হিসেবে তার সঙ্গে আব্বার সম্পর্ক থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সাঈদ: আপনি কি মনে করেন ডা. জাকির নায়েক ফতোয়া দেওয়ার যোগ্য লোক?
ফারিক: ডা. জাকির নায়েক মুফতি নন। তিনি ফতোয়া দেন না। বড় বড় আলেমদের ফতোয়া নকল করেন শুধু।
সাঈদ: আলেমদের অনুসরণ বিষয়ে তার মতামত কী? সাধারণ মানুষ কি নিজে নিজে ইসলামি বই পড়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নাকি আলেমদের অনুসরণ করবে?
ফারিক: ইসলামি শরিয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অবশ্যই আলেমদের অনুসরণ করতে হবে। ডা. জাকির নায়েক নিজেও আলেমদের অনুসরণ করেন। ইসলামি কোনো বিষয়ে জানার জন্য তিনি সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় আলেমের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেন।
সাঈদ: মাজহাব সম্পর্কে তার মত কী?
ফারিক: ইদানীং দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষ কয়েক মাস বা কয়েক বছর নিজে নিজে পড়াশোনা করেই বলছে, আমি যেই ফিকহ অনুসরণ করি— সেটিই একমাত্র সঠিক। আসলে এটা ভুল। মাজহাবের সব ইমামই বড় বড় স্কলার। তিনি সবাইকে ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন। তারা প্রত্যেকেই অপরের মতকে সম্মান করতেন। প্রত্যেক ইমাম নিজ মতকে উত্তম ভাবতেন। নিজের মতই একমাত্র সঠিক আর অন্যদের মত ভুল— এরকম মনে করতেন না। নিজের মতকেই একমাত্র সঠিক মনে করাই হলো সমস্যা। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও এরকম মতভিন্নতা ছিল, কিন্তু ফাটল ছিল না। সুতরাং নির্দিষ্ট একটি মাজহাব অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে নিজ নিজ মাজহাবের দলিলগুলো জানা থাকা জরুরি। মাজহাব সম্পর্কে এটাই তার মত।
সাঈদ: আচ্ছা, এমন কোনো বিষয় কি আছে যাতে ডা. জাকির মনে করেছেন তার মতটি ভুল, পরবর্তী সময়ে তিনি সেটি থেকে ফিরে এসেছেন?
ফারিক: জি, এরকম কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলো থেকে তিনি পরবর্তী সময়ে ফিরে এসেছেন।
সাঈদ: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন)।
ফারিক: আপনাকেও জাজাকাল্লাহ।