চোখজুড়ানো কুল শরিফ জামে মসজিদ
রুশ ফেডারেশনভুক্ত একটি মুসলিম প্রজাতন্ত্র তাতারিস্তান। তাতারিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ মুসলমান। কাজান এই প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। কাজানে রয়েছে তাতারি মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিখ্যাত কুল শরিফ জামে মসজিদ।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৫৫২ সালে রুশ বাহিনীর আক্রমণ থেকে কাজান শহর রক্ষার জন্য সংঘটিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শহীদ ও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ‘কুল শরিফ’ এর নামানুসারে এই মসজিদের নাম রাখা হয়— কুল শরিফ জামে মসজিদ।
0
রুশ বাহিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট এই এলাকা দখল করতে এলে মর্দে মুমিন অকুতোভয় নির্ভীক এই বীরসেনানী তার সকল ছাত্র ও মুরীদ-দরবেশ নিয়ে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পৈশাচিক আক্রমণে বীর সেনাপতি এই আলেমেদ্বীন শহীদ হওয়ার পরই রুশ বাহিনী কাজান শহর দখল করে নেয়।
মসজিদটি নির্মাণের কিছুদিন পর রাশিয়ার জল্লাদখ্যাত ইভান দ্যা টেরিয়্যাফ মসজিদটি ভেঙে ফেলে। এভাবে চলে যায় কয়েশ বছর। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে সৌদি সরকার ও তাতারি মুসলমানদের জোর দাবিতে মসজিদ পুননির্মাণের আনুমতি দেয় রুশ সরকার।
মসজিদের পুরাতন ডিজাইন অক্ষুণ্ন রেখে নতুন ডিজাইন প্ল্যানে ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর পুননির্মাণের কাজ চলে। তাতারিস্তানে ইসলাম আগমনের ১ হাজার বছর উদযাপন উপলক্ষে ২০০৫ সালের ২৪ শে জুন সৌদি মন্ত্রীসভার প্রভাবশালী সদস্য শায়খ সালেহ বিন আবদুল আজিজ এই মসজিদ উদ্বোধন করেন।
সৌদি আরব ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন ইসলামি সংস্থার সহযোগিতায় নির্মিত হয় এই মসজিদ। মসজিদের সামনে দাতা রাষ্ট্র, সংস্থা ও ব্যক্তির নামের একটি তালিকা রয়েছে। বর্তমানে এই মসজিদটি রাশিয়ার ২য় বৃহত্তম মসজিদ।
এই মসজিদের আয়তন ১৯ হাজার বর্গমিটার। মসজিদের ভিতরে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। আর মসজিদের প্রাঙ্গণে প্রায় ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।
কুল শরিফ জামে মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের এক চমৎকার উপহার। তাই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়েব সাইটে এই মসজিদকে ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাতারিস্তানের স্থপতি-বিশেষজ্ঞরা বলেন, মস্কোর প্রসিদ্ধ গির্জা ‘সেন্ট ব্যাজল’স ক্যাথিড্যাল’ এই মসজিদের পুরাতন ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়। গির্জার ওপরে আটটি বাতিঘর দ্বারা বিশাল গম্বুজটি আলোকিত ও সজ্জিত করা হয়েছে। আর কুল শরিফ মসজিদে পুরাতন ডিজাইানে ৪টি ছোট আর ৪টি মিনারের আলো দ্বারা গম্বুজকে আলোকিত করা হয়েছিল। এই নকশা রাশিয়ার প্রাচীন স্থপত্যশিল্পের আর কোথাও নেই।
মসজিদের কেন্দ্রিয় গম্বুজের উচ্চতা ৩৯ মিটার। আর বড় ৪টি মিনারের উচ্চতা ৫৭ মিটার করে। রাশিয়ার ভোলগা অঞ্চলের মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধারার জন্য মসজিদ কমপ্লেক্সের একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক জাদুঘর রয়েছে। এই জাদুঘরে কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও একটি গ্রন্থাগার রয়েছে।
এই গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন মজিদ। ২ মিটার দৈর্ঘ ও দেড় মিটার প্রস্থ ৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই কোরআন শরিফ স্কটিশ কাগজে ছাপা হয়ছিল।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার।
ঢাকা পোস্টের ইসলাম পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]