রমজানের এই দিনে বিদায় নিয়েছিলেন যে মুসলিম মনীষী
শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাইল বিন ইউসুফ আন-নাবহানী। উসমানীয় যুগে তাসাওউফ, ইসলামী আইনশাস্ত্র ও আরবি সাহিত্যের পথিকৃতদের একজন। তিনি ১৩৫০ হিজরিতে রমজানের নবম দিনে পৃথিবী ছেড়ে রবের ডাকে সাড়া দেন।
১২৬৫ হিজরি মোতাবেক ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনের হাইফা জেলার ইজজিম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ইউসুফ আল-নাবহানী। তিনি ফিলিস্তিনের বাদিয়ার আরবদের নাবহানের বংশের সন্তান, তার পূর্বসূরীরা ওই গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
ইউসুফ আন-নাবহানীর পড়াশোনার হাতেখড়ি নিজ বাবার মাধ্যমে। বাবাই ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক। বাবার কাছেই কোরআন তেলাওয়াত শেখেন তিনি।
১২৮৩ হিজরি মোতাবেক ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ শিক্ষার জন্য নাবহানীকে মিশরের আল-আজহারে পাঠানো হয়। এর আগে ইউসুফ আল-নাবহানীর বাবা নিজেই ছেলেকে ইসলামী ফেকাহ, ব্যাকরণ এবং অলঙ্কারশাস্ত্রের বিভিন্ন বই পাঠদান করেন।
পড়াশোনার জন্য ছয় বছরের বেশি সময় আল-আজহারে কাটিয়েছিলেন নাবহানী। এসময় তিনি ইসলামী ও জাগতিক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। এরপর ১২৮৯ হিজরি মোতাবেক ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। এবং আকা শহরে আরবি ভাষা ও ইসলামী জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিলেন। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে জেনিনে বিচারক এবং পরবর্তীতে জেরুজালেমের একটি ফৌজদারি আদালত ও বৈরুতে প্রধান বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইউসুফ আন-নাবহানী।
১২৯৩ হিজরি মোতাবেক ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুলে যান নাবহানী, সেখানে দুই বছর অবস্থান করেন। এ সময় তিনি ‘আল-জাওয়ানেব’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেব দায়িত্ব পালন করেন।
এর মধ্যবর্তী সময়ে জেরুজালেম, মসুল, দামেস্ক, বৈরুতসহ বিভিন্ন শহরে বিচারকের দায়িত্ব পালেন। এসময় বৈরুতে তিনি তার বিভিন্ন বই লেখা ও ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করেন।
এরপর ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে আবার উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুলে ফিরে যান এবং এইবার সেখানে কয়েক বছর অবস্থান করেন। এ সময় তিনি নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তার লেখা আশ-শারাফ বইটি লেখেন।
ইউসুফ আন-নাবহানী এখান থেকে নবীজির শহর মদিনায় চলে যান। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘোষণার সময় মদিনায় অবস্থান করেছিলেন তিনি। এরপর আবার নিজের জন্মগ্রাম ইজজিমে ফিরে আসেন। মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫০ হিজরির ৯ রমজানে ইন্তেকাল করেন এই বিখ্যাত মনীষী।
সূত্র : আল আরাবিয়া