রমজানে কর্মীদের কাজের চাপ কমালে যে পুরস্কার পাবেন
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কাজকর্মের বিষয়টি মানুষের স্বভাবজাত। অলস, অকর্মণ্য ছাড়া সবাই কাজেই স্বস্তি আর শান্তি খুঁজে। জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে একে অপরের সহযোগিতার মুখাপেক্ষী। এখানে কেউ কর্মী আবার কেউ প্রধান (মনিব)। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় অধীনস্থদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানদের। এমনকি জীবনের অন্তিম মুর্হুতে তিনি যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন তার একটি হলো নামাজ, অপরটি অধীনস্তদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তারা (অধীনস্থরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছে, তার (মালিক/দায়িত্বশীল কর্মকর্তার) উচিত, তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই খাওয়ানো যা সে নিজে খায় এবং তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই পরিধান করানো যা সে নিজে পরিধান করে। আর তাকে (অধীনস্থকে) এমন কাজের ভার দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। যদি কখনো তার ওপর অধিক কাজের দায়িত্ব চাপানো হয় তবে যেন (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) তাকে সাহায্য করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তাই সবার উচিত অধীনস্ত বা কর্মীদের প্রতি সদয় হওয়া। তাদের কাজ, কাজের চাপের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা। বিশেষ করে রমজানে কর্মীদের কাজ কমিয়ে দেওয়া প্রধানদের জন্য আবশ্যকীয়। রমজানে কর্মীদের প্রতি সদয় ব্যক্তির জন্য আল্লাহর রাসুল জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। নিজের পবিত্র জবানে তিনি বলেছেন, রমজানে যে ব্যক্তি তার অধিনস্তদের কাজ হালকা করে দিবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। (শুআবুল ইমান; বায়হাকি)
আল্লাহর রাসুল আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, আল্লাহ তার ওপর রহমতের ডানা প্রসারিত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১. দুর্বলের সঙ্গে নম্র ব্যবহার, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে মমতা জড়ানো কোমল ব্যবহার এবং ৩. দাস-দাসীর প্রতি সদাচরণ।’ (তিরমিজি)
হাদিসের বাণী এবং সুসংবাদের প্রতি লক্ষ রেখে রমজানে কর্মীদের কাজ কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে করে কর্মীরা স্বস্তি পাবেন, রহমতের এই মাসে গতানুগতিক নিয়মের বাইরে এসে আমল, ইবাদতে বিশেষ মনোযোগ দিতে পারবেন।
এ মাসে সবার জন্য আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আমলের সওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকগুণ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায় করলো। (শুআবুল ঈমান : ৩/৩০৫-৩০৬)
এ মাসে কর্মীদের কাজ কমিয়ে আমলের সুযোগ করে দিলে প্রধানরাও পাবেন বিশেষ সওয়াব। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ কর্মের পথ দেখাবে সে সৎকর্মকারীর সমান সওয়াব পাবে। (সহিহ মুসলিম; ১৮৯৩)