নবীজির প্রতি ভালোবাসা যেমন হবে
মানুষ এক সময় পথহারা, দিশেহারা ছিলো। হেদায়াত ও সঠিক পথ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলো। এ সময় আল্লাহ তায়ালা হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি এসে মানুষকে সত্য-মিথ্যা চিনিয়েছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন। মানুষের প্রতি এ ছিল আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৬৪)
তাই আল্লাহ তায়ালা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যকীয়। দুনিয়াতে যতরকমের ভালোবাসা ও ভালোলাগার জিনিস আছে— সবকিছুর ওপরে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান রাখা জরুরি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, নবীর ওপর মুমিনদের জানের চেয়ে বেশি হক আছে। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৬) অর্থাৎ যেই ব্যক্তি নিজের জান-মাল ও প্রবৃত্তির ওপর তার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে না পারবে, বোঝা যাবে তার ঈমানে ঘাটতি আছে।
একবার হজরত ওমর ফারুক (রা.) রাসুলকে (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জান ছাড়া।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘না (একথা সত্য নয়), আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, ওইসময় পর্যন্ত (সত্য) নয়, যতক্ষণ না কারও কাছে আমি তার জানের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।’
রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে এই কথা ওমর (রা.)-এর মনে বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করল, এবং তার মন ওই সময়ই বদলে গেল। তিনি বললেন, ‘খোদার কসম, আপনি আপনি আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ রাসুল (সা.) বললেন, ওমর, এক্ষণে তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৬৩২)
হজরত আনাস রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبّ إِلَيْهِ مِمّا سِوَاهُمَا...
অর্থাৎ, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম হল, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে প্রিয় হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭)
এক সাহাবি রসুলের দরবারে হাজির হয়ে বলেন— ‘হে নবী, আপনি আমার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ। আপনাকে যখন মনে পড়ে, আমি সইতে পারি না, ছুটে আসি আপনার খেদমতে। যখন আমার ও আপনার মৃত্যুর পরের কথা মনে আসে, তখন আমি ভাবি আপনি নিশ্চয় জান্নাতে সর্বোচ্চ সম্মানে সুউচ্চ আসনে অবস্থান করবেন। আমি যদি জান্নাতে যাই, তাহলে আপনাকে কীভাবে দেখব?’ এসময় আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাজিল করেন— ‘যারা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য করবে, তারা তাদের সাথে থাকবে নবী সিদ্দিক শহীদ ও নেককারদের মধ্যে আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন, আর সাথী হিসাবে তারা কতই-না সুন্দর।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৬৯) এরপর আল্লাহর রাসুল (সা.) ওই সাহাবিকে ডেকে এই আয়াত শোনান।
আনাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে দেখেছি লাউ পছন্দ করতে, তারপর থেকে আমারও লাউ ভালো লাগতে শুরু করে। এটাও ভালোবাসার আলামত যে, রসুলের সাথে সম্পর্কযুক্ত সবকিছুর প্রতি ভালোবাসা থাকা। তিনি যেই শহর ভালোবাসতেন, তার জন্যে জান উৎসর্গ করার মন থাকা, তার প্রতিটি বালুকণার প্রতি ভালোবাসা রাখা— এই সবই পারতপক্ষে রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসারই নিশানা।
এনটি