দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বালকের নিখুঁত তেলাওয়াতের দৃশ্য ভাইরাল
১৩ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ ঈসা আল হাদি। জন্মগতভাবেই চোখে দেখে না, ঠিকমতো হাঁটতে পারে না, এমনকি নিজে নিজে মনের ভাবও প্রকাশ করতে পারে না। তবে বিশ্ব বিখ্যাত কারীদের অনুকরণে তার নির্ভুল কোরআন তেলাওয়াতের একটি ভাইরাল দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
কোনও ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছাড়াই কোরআনের বড় একটি অংশ মুখস্ত করে ফেলেছেন মোহাম্মদ ঈসা আল হাদি।
গত মাসে আইনস্টাইন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস আয়োজিত একটি ইভেন্টে আড়াই ঘণ্টা সময় ধরে পবিত্র কোরআনের দীর্ঘতম সুরা বাকারা তেলাওয়াত করে রেকর্ড তৈরি করেন মোহাম্মদ ঈসা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তেলাওয়াতকারী প্রথম প্রতিবন্ধী বালকের কাতারে নাম লেখালেন তিনি।
তার তেলাওয়াতের এই দৃশ্য ভাইরালের পর সবাইকে তা মুগ্ধ করেছে এবং অনেকের কাছ থেকে সে প্রশংসা পেয়েছে। মোহাম্মদ ঈসার প্রতিভার প্রতি মানুষের এই সমর্থন ও ভালোবাসায় তার পরিবার আপ্লুত।
তার বাবা আব্দুল হাদি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা তার কাছে বসে কোরআন তেলাওয়াত করতাম। তার বয়স যখন প্রায় চার বছর তখনই আমরা লক্ষ্য করেছি যে সে কোরআনের আয়াতগুলো দ্রুত বুঝতে পারছে এবং তেলাওয়াত করছে। এটা দেখে আমরা তাকে সমর্থন করি এবং তার উৎসাহ বাড়ানোর চেষ্টা করি।’
দুবাইয়ে অবস্থানরত ভারত প্রবাসী তার বাবা আরও বলেন, মোহাম্মদ শুধুমাত্র আয়াতগুলো তেলাওয়াত করতে পারে এমন নয় বরং কারী আবদুল বাসিতসহ আরও বিখ্যাত ও সুপরিচিত কারীদের সুর অনুসরণ করেও তেলাওয়াত করতে পারে।
খালিজ টাইমসের একটি টিমের কাছেও কোরআন তেলাওয়াত করে শোনান মোহাম্মদ ঈসা আল হাদি।
প্রতিবন্ধী বালক মোহাম্মদ ঈসা আল হাদিকে তার বড় বোন সুমাইয়া এবং আয়েশা সব সময় সমর্থন করেছেন। তারা নিয়মিত তার পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করেন। বড় বোন সুমাইয়া সর্বপ্রথম তাকে সূরা আশ-শামস পড়ে শোনান।
মোহাম্মদ ঈসা আল হাদি সম্পর্কে তার বোন আয়েশা বলেন, ‘সে একজন ভালো শ্রোতা এবং সবচেয়ে মিষ্টি ভাই। আয়েশা বলেন, ‘আমি সবসময় এসে তাকে আমার সব সমস্যা বা পরীক্ষার চাপের কথা বলি। সে খুব বেশি সাড়া দেয় না আমার কথাও তবে সব কিছু মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং কখনও কখনও চমৎকার কিছু কথা বলে। তার সঙ্গে কথা বলার পরে আমি সবসময় ভাল বোধ করি।’
খুব দ্রুতই কোরআন শিখতে পারলেও মোহাম্মদ ঈসা স্কুলে যায় না। সে তার খাওয়া বা টয়লেট ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও পরিবারকে বোঝাতে অক্ষম।
তার বাবা বলেন, আমরা তাকে স্কুলে পাঠাই না কারণ তার শেখার বিষয়টি একান্ত তার মেজাজের ওপর নির্ভর করে। কারণ, কখনও কখনও সে একদিনে কোরআনের অনেকগুলো আয়াত শেখে আবার কখনও কয়েকদিনেও কিছু অংশও পড়তে চায় না।
তার বাবা বলেন, মোহাম্মদ ঈসার ৫ বছর বয়সে তাকে নিয়ে ওমরা করতে যাই, তাওয়াফ করার সময় আমরা কী করছি সে তা বোঝার চেষ্টা করে, সে খেয়াল করে বুঝতে পারলো মানুষজন দোয়া পড়ছে, এরপর তাওয়াফের দ্বিতীয় চক্করের সময় সেও জোরে জোরে দোয়া পড়তে শুরু করে যা অনেকেই আগ্রহভরে দেখছিলেন।
এ বিষয়টি জানতে পেয়ে মসজিদুল হারামের ইমাম দায়িত্বরত পুলিশদের মাধ্যমে আমাদের খুঁজে বের করেন এবং আমাদের তার পাশে প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের সুযোগ দেন। এবং পুলিশ আমাদেরকে সহজেই হাজরে আসওয়াদ (কাবার কাছের কালো পাথর) চুম্বনে সহায়তা করেন। এটি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতিগুলির মধ্যে একটি।
আব্দুল হাদি বলেন, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আমি ফিরে এলে তুমি কোন সুরাটি শুনতে চাও? অফিস থেকে ফিরে আমি তাকে আমার কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াই, তার সঙ্গে সুন্দর কিছু সময় কাটাই। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন এই মুহুর্তটির জন্য অপেক্ষা করি।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে
সূত্র : খালিজ টাইমস
এনটি