যৌতুক নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে
যৌতুক বরের পক্ষ থেকে কনের পরিবারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়গুলোর একটি। দেশীয়, ইসলামী আইনে বিষয়টি নিষিদ্ধ ও অপরাধমূলক হলেও বছরের পর বছর ধরে সমাজে চালু রয়েছে এই অমানবিক প্রথা। বরাবরই ইসলাম এই প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলামে যৌতুকের বিপরীতে নারীর জন্য মোহরানার বিধান রাখা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বর্ণিত হয়েছে, ‘নারীদেরকে খুশিমনে তাদের মোহর প্রদান করো।’ (সুরা নিসা : ৪)
বতর্মান সমাজে বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের অন্য সব বিধান, নিয়ম অনুসরণ করা হলেও দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় নামেমাত্র। অনেকটা যেন নিয়ম রক্ষার বিষয়। আদায় করার সদিচ্ছা থাকে না অনেকের মাঝেই। অথচ দেনমোহর বিয়ে বৈধ করার মাধ্যমও বটে। বিয়েতে দেনমোহর প্রদান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
এমনকি কারো মাঝে মোহরানা প্রদানের ইচ্ছা না থাকলে তার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এমন ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নারীকে কম বা বেশি দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করল, অথচ তার অন্তরে দেনমোহরের সে হক আদায়ের আদৌ কোনো ইচ্ছেই নেই, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে।’ (তাবারানি)
ইসলামের পক্ষ থেকে দেওয়া নারীর স্পষ্ট অধিকার দেনমোহর আদায়ের প্রবণতা না থাকলেও যৌতুক নেওয়ার তোড়জোর রয়েছে সমাজে অনেকের মাঝে। অথচ যৌতুক একটি নিপীড়নমূলক প্রথা।
কনেপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে তার পরিবার থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায় করা হয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা কাউকে জুলুম করে সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)।
ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয়, বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়েরও বিপক্ষে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিয়েতে ব্যয় খুব সামান্যই হয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৪৫২৯)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে।
তবে কোনও ধরণের চাপ ও শর্ত ছাড়া কন্যাপক্ষ খুশিমনে বরকে বা বরপক্ষকে কিছু দিলে তা যৌতুক হবে না, বরং তা উপহার বা হাদিয়া হিসেবে গণ্য হবে।
রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তার মেয়ে জামাতাকে খুশি মনে কিছু উপহার দিয়েছিলেন। তবে সেটা যৌতুকের মধ্যে পড়বে না। আরবীতে একে جَهَاز ‘জাহায’, বলে, এটি বৈধ এবং প্রচলিত যৌতুকের সাথে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কারণ এমন উপহারের জন্য শর্ত হল, তা হতে হবে কোনো প্রকার সামাজিক চাপ ছাড়া, স্বতঃস্ফূর্ত ও সন্তুষ্টচিত্তে।
হাদিসে এসেছে, ‘প্রিয় নবী (সা.) তাঁর মেয়ে হজরত ফাতেমার (রা.) বিয়েতে তার সংসারের জন্য একটি সাদা পশমি চাদর, একটি পানির মশক এবং ইজখির ঘাসভর্তি একটি বালিশ উপহার দিয়েছিলেন।’ (নাসায়ি : ৩৩৮৪, ইবনে মাজাহ : ৪১৫২)।
কন্যাপক্ষকে কোনো কিছু দিতে বাধ্য করা, চাপ সৃষ্টি করা বা পরিস্থিতি তৈরি করা যৌতুক হিসেবে বিবেচিত- যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘কারও ধন-সম্পদ তার পূর্ণ সন্তুষ্টি ব্যতীত বৈধ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২০৬৯৫)
এনটি