জীবিকার তাগিদে অমুসলিম দেশে যাওয়া যাবে?
হালাল উপার্জন এবং হালাল উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করা ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই ইবাদত করার জন্য।
ইবাদত করা যেমন ফরজ, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জন বা হালাল রুজি অন্বেষণ করাও ফরজ। আল্লাহ পাকের নির্দেশ- সালাত সমাপ্ত হয়ে গেলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহে জীবিকা অন্বেষণ কর, তথা উপার্জন কর (সূরা জুমুয়া-১০)।
জীবিকা উপার্জনের জন্য মানুষ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। কেউ চাকরি করেন, কেউবা ব্যবসা বাণিজ্য করেন। আবার অনেকে দেশের বাইরে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কাজ করতে যান। এক্ষেত্রে সবাই মুসলিম দেশে যাওয়ার সুযোগ পান না। অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতেও যেতে হয় অনেককে।
অমুসলিম দেশে মুসলিমদের বসবাস, চাকরি, লেখাপড়া ও নাগরিকত্ব গ্রহণ করার বিধান নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের অবস্থা এবং ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি তাদের মনোভাব ও অবস্থান বিবেচনায়। বিশিষ্ট্য ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ,ড. ইউসুফ আল কারযাভি রহ. বলেছেন, অমুসলিম দেশগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. যেখানে ধর্মবিদ্বেষ প্রবল : যেসব দেশে সাধারণভাবেই ধর্মবিদ্বেষ প্রবল। বিশেষত যেসব দেশের মানুষ ইসলামের বিধি-বিধানের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে, ইসলামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সন্ত্রাস বলে এবং যেসব দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামবিদ্বেষ উসকে দেয়, সেসব দেশের স্থানীয় মুসলিমরা সেখানে ধৈর্যসহ বসবাস করবে এবং দ্বিনের ব্যাপারে যেন শীথিলতা চলে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।
তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অবকাশ হলো, ‘কিন্তু কেউ অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে অনন্যোপায় হলে আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১১৫)
তবে কোনো মুসলিম দেশ থেকে এমন দেশে হিজরত (দেশান্তর) করা বৈধ নয়। কেননা যেখানে ইসলাম দ্বিন পালনের সুযোগ না থাকলে মাতৃভূমি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে এমন পরিবেশে যাওয়া কিছুতেই বৈধ হবে না।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ওপর অবিচার করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতারা বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, পৃথিবীতে আমরা অসহায় ছিলাম। তারা বলে, আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে? তাদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কত মন্দ আবাস।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৯৭)
২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে : যেসব দেশে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও চিন্তার স্বাধীনতা আছে এবং যেখানে বিশেষ একটি ধর্মের অনুসারীরা অন্যদের প্রভাবিত ও পদানত করতে সচেষ্ট নয়; বিশেষত যেখানে ধর্মের প্রশ্নে রাষ্ট্রের অবস্থান নিরপেক্ষ এমন দেশে বৈধ উদ্দেশে যাওয়া এবং অবস্থান করা বৈধ। যেমন চাকরি, লেখাপড়া ইত্যাদি।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জানেন যে তোমাদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)
তবে এমন দেশে অবস্থানের ক্ষেত্রেও শর্ত হলো নিজের, পরিবারের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দ্বিনদারির ব্যাপারে আশঙ্কা না থাকা এবং বস্তুবাদী দর্শনের প্রভাবে ঈমান ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসে দুর্বলতা তৈরি না হওয়া। যদি সেখানে যাওয়ার পর এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তবে তা পরিত্যাগ করতে হবে। জীবন সেখানে যতই প্রাচুর্যময় হোক না কেন।
কেননা আল্লাহ বলেন, ‘বোলো, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার অপেক্ষা প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাস, তবে অপেক্ষা কোরো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৪)
এনটি