বিবাহ বিচ্ছেদ : আল্লাহর কাছে সব থেকে অপ্রিয় বৈধ বিষয়
বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী আজীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ এই পথ চলায় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য ঝগড়া-বিবাদ হয়ে যায় অনেক সময়। এটা স্বাভাকি জীবনের অংশ। কখনো এমন কিছু হলে নিজেরাই তা মিটমাট করে নেওয়া উচিত। কিন্তু তা যদি বড় আকার ধারণ করে, তখন দুই পরিবার আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টার কথা বলা হয়েছে কোরআনে।
বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তার (স্বামীর) পরিবার থেকে একজন ও তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মিমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ -(সূরা আন নিসা: ৩৫)
এরপরও যদি কোনও দম্পতির একসঙ্গে থাকা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা রাখা হলেও তালাক প্রদানে কখনোই উৎসাহ দেওয়া হয় না। এটা নিতান্তই নিরুপায় অবস্থা থেকে উত্তরণের একটা অপছন্দনীয় পথ। বিয়ের বন্ধন ছিন্ন করা সমাজেও যেমন কারও কাছে কাম্য নয়, তেমনি ইসলামেও কাম্য নয়। ইসলামে এটাকে বলা হয়েছে ‘সর্বনিকৃষ্ট হালাল’।
হজরত মুআররিফ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে হালাল বিষয়ের মধ্যে তালাকের চেয়ে অধিকতর ঘৃণিত আর কিছু নেই।’ (আবু দাউদ : ২১৭৭)।
আল্লামা তীবি (রহ.) বলেন, তালাক ইসলামে বৈধ হলেও তা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়, কেননা শয়তানের কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো। সুতরাং শয়তানের প্রিয় কাজ আল্লাহর কাছে কখনো পছন্দনীয় হতে পারে না।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ে করো, কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।’ (আকামুল কুরআন, ৩৯ খ-, পৃষ্ঠা : ১৩৩)
দাম্পত্য জীবনে দুইজন মানুষের একসাথে মানিয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসলামে। এক্ষেত্রে পুরুষদের সহনশীল ও ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে বলা হয়ছে। আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৮১)।
এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে তাদের সন্তানদের ওপর। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ অনিশ্চিত করে দেয় অনেক ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ। তারা সবসময় একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই নারী-পুরুষ উভয়ের কর্তব্য তালাক থেকে দূরে থাকা।
তালাক দেওয়ার ক্ষমতা যেহেতু পুরুষের, তাই পুরুষকে ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই সংযমী হতে হবে। অন্যদিকে নারীর ব্যাপারেও হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে নারী স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।’ (ইবনে মাজা : ২০৫৫)
এনটি