শীতকালের সহজ ৩ আমল
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বছর জুড়ে ঋতুর পরিবর্তন উপভোগ করেন দেশের মানুষ। ঋতুর এই পরিবর্তন আল্লাহ তায়ালার নির্দশনাবলীর অন্যতম। সব ঋতু ও প্রতিটি দিন আল্লাহ তায়ালার দান, এতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন।’ -(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)
ঋতুর এই পরিবর্তন মানুষের জন্য আল্লাহর নেয়ামত। বিশেষত শীতকাল মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। শীতকালের এই পরিবর্তন মুমিনের জন্য রহমত হয়ে আসে।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ -(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১৬৫৬)
এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে প্রতিপালক, আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে, আর একটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)
আরেক হাদিসে শীতকালে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো বান্দা তীব্র শীতের সময় বলে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে জামহারির জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। তখন আল্লাহ জাহান্নামকে লক্ষ্য করে বলেন, আমার এক বান্দা তোমার জাহান্নাম থেকে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। আমি তোমাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি, আমি তাকে মুক্তি দিলাম।’
সাহাবিরা বলেন, জামহারির কী? জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘জামহারির জাহান্নামের এমন একটি ঘর, যেখানে কাফিরদের নিক্ষেপ করা হবে। শীতের তীব্রতায় তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ (আস-সিলসিলাতুদ-দায়িফাহ, হাদিস : ৬৪২৮)
এ সময় মানুষ চাইলে সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। শীতকালে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার তিনটি আমল তুলে ধরা হল এখানে-
শীতকালে রোজা রাখা
রোজা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেকি লাভের অন্যতম মাধ্যম। শীতকালের রোজায় স্বল্প সময় ব্যয় হয়। সুতরাং শীতকাল রোজা পালনের মোক্ষম সুযোগ। এ জন্য শীতকালের রোজাকে বিনা পরিশ্রমে নেকি লাভের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আমির ইবনে মাসউদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘শীতকালের রোজা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৭)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে যে ব্যক্তি একদিন রোজা রাখল, আল্লাহ তায়ালা প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। (বোখারি: ২৮৪০, মুসলিম: ১১৫৩)
অতএব শীতের এই মওসুমে বেশি বেশি রোজা রাখা উচিত। বিশেষত- আইয়ামে বিজ তথা হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা।
তাহাজ্জুদ পড়া
শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। কেউ চাইলে পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়তে সক্ষম হবে। একদিকে ঘুমের যেমন কোনো কমতি হবে না অন্যদিকে মহান একটি ইবাদত আদায়ের পবিত্র অভ্যাস গড়ে উঠবে।
আল্লাহ তায়ালা মোমিনদের সম্বন্ধে বলেন, তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সেজদাহ: ১৬) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। (সূরা আয যারিয়াত: ১৭)
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
শীত নিবারণের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ সব মানুষের থাকে না। খাদ্য-পুষ্টি ও বাসস্থানের অভাবে অনেকেই শীতে মানবেতর জীবন-যাপন করে। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো মুমিনের ক্ষুধায় অন্ন জোগায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল আহার করাবেন। কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো মুমিনের পিপাসায় পানি পান করায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সিল করা জান্নাতি পানীয় পান করাবেন। কোনো মুমিন যদি অন্য কোনো বস্ত্রহীন মুমিনকে পরিধান করায়, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরিধান করাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৯)
এনটি