শিশুকে মারধরের ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর সতর্কবাণী
শিশুর মানস গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মেধার বিকাশে ও বোধ-বুদ্ধি তৈরিতে শিক্ষকের প্রভাব রয়েছে। তাদের কারণে চিন্তা-চেতনার সুন্দর নির্মাণ হয়। কিন্তু শিশু-শিক্ষার্থীকে যদি নির্মমভাবে মারধর করা হয়? গণমাধ্যমে যেমনটা খবর পাওয়া যায়। সত্যি হলো- শিশু শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের দেশের প্রায়ই প্রাথমিক শিক্ষার সব শিক্ষাব্যবস্থাতে রয়েছে।
কেন এমনটা হয় আর কীভাবে এই সমস্যাটা নিরসন করা যায়— এই বিষয়ে শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারেন। এসব দমনে কঠোর সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
শিশুদের মারধরের ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর সতর্কবাণী কী ছিল— সে ব্যাপারে অতি সংক্ষেপে পাঠকের জন্য আলোচনা।
রাগ নিয়ে আসে অনেক ক্ষতি
রাগী ও বদমেজাজি শিক্ষক সবসময় শিক্ষার্থীদের অপছন্দের তালিকায় থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের রুক্ষ মনোভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা নির্মমতার শিকার হয়। এটা স্পষ্ট অন্যায় ও জুলুম। এই রাগই এক সময় অনিষ্টতা ও নানা বিপদ ডেকে আনে।
জনৈক সাহাবি থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল—
হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলেন, ‘তুমি রাগ কোরো না।’ লোকটি বলল, রাসুল (সা.) যা বলেছেন— তা বলার পর আমি চিন্তা করে দেখলাম, ক্রোধই হলো সব অনিষ্টের মূল।
(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩১৭১)
অন্যায়ভাবে মারা গুনাহ ও অপরাধ
শিশুকে কিংবা অন্য যে কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর জায়েজ নেই। এই সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে, কিয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১৮৬)
মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.) বলেছেন, শিশুদের মারধর করা খুবই ভয়াবহ। অন্য গুনাহ তো তাওবার মাধ্যমে মাফ হতে পারে। কিন্তু শিশুদের ওপর অত্যাচার করা হলে— এর ক্ষমা পাওয়া খুবই জটিল। কেননা এটা হচ্ছে বান্দার হক। আর বান্দার হক শুধু তাওবার মাধ্যমে মাফ হয় না। যার হক নষ্ট করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও মাফ চেয়ে নিতে হয়। এদিকে নাবালক শিশুর ওপর জুলুম তো বড় অপরাধ। উপরন্তু নাবালকের ক্ষমা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য এ অপরাধের মাফ পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। তাই শিশুদের মারধর করতে ও তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করার ব্যাপারে খুবই সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। (ইসলাহি মাজালিস, মুফতি তাকি উসমানি)
রাসুল (সা.)-এর সুমহান হাদিস থেকে সবাই শিক্ষা নেওয়া জরুরি। সেই শিক্ষার আলোকে শিক্ষকরা তাদের শাসনপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনুক। শিক্ষাদান পদ্ধতি অত্যন্ত সুন্দর ও মধুর করুক। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন।