৭০ হাজার বার কালিমা খতম করলে কবরের আজাব মাফ হয়?
কেউ মারা গেলে তার স্বজন পরিচিত লোকজনের উচিত মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনা করা। এতে মৃত ব্যক্তির কবরের জীবন সুখের হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১)
পৃথিবীতে নিজের করা আমল ও মৃত্যুর পরে স্বজনদের দোয়া মৃত ব্যক্তির কাজে আসবে। তাই মৃতব্যক্তির স্বজনেরা মৃতের জন্য আমল করে তা রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
সমাজে ও লোকমুখে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, কোনো মৃতের জন্য সত্তর হাজার বার কালিমা তাইয়্যেবা পড়লে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কেউ কেউ নিজে জীবদ্দশায় এই উদ্দেশ্যে সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ে। তবে মৃতের জন্য পড়ানোর রেওয়াজটা বেশি।
কিন্তু আলেমদের মতে, মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনায় ৭০ হাজার বার কালিমা খতমের কথা কোনো হাদীসে নেই। এটি লোকমুখে প্রচলিত কথা, যার কোনো ভিত্তি নেই।
আলেমরা বলেন, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩)
তবে কালিমা তাইয়্যেবা পড়া উত্তম জিকর। একাধিক হাদিসে এই কালিমা পাঠ করার ফজিলত এসেছে। এক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ মনে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে। -(মুসনাদে আহমদ ৪/৪১১)
তাই নিজের জন্য কালেমা পড়া কিংবা মৃতের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে পড়া ভালো। কিন্তু মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনায় ৭০ হাজার বার বা কোনও সংখ্যা নির্দিষ্ট করে কালিমা খতম অথবা অন্য কোনও আমল করার নিয়মটি ঠিক নয়।
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় তার জন্য হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া উচিত। নবী কারিম (সা.) মৃতদের জন্য যেসব দোয়া করতেন, তার একটি হল-
اللهُـمِّ اغْفِـرْ لَهُ وَارْحَمْـه، وَعافِهِ وَاعْفُ عَنْـه ، وَأَكْـرِمْ نُزُلَـه ، وَوَسِّـعْ مُدْخَـلَه ، وَاغْسِلْـهُ بِالْمـاءِ وَالثَّـلْجِ وَالْبَـرَدْ ، وَنَقِّـهِ مِنَ الْخطـايا كَما نَـقّيْتَ الـثَّوْبُ الأَبْيَـضُ مِنَ الدَّنَـسْ ، وَأَبْـدِلْهُ داراً خَـيْراً مِنْ دارِه ، وَأَهْلاً خَـيْراً مِنْ أَهْلِـه ، وَزَوْجَـاً خَـيْراً مِنْ زَوْجِه، وَأَدْخِـلْهُ الْجَـنَّة ، وَأَعِـذْهُ مِنْ عَذابِ القَـبْر وَعَذابِ النّـار
উচ্চারণ : আল্লাহহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আযাবিল কাবরি ওয়ামিন আযাবিন নার।
অর্থ : হে আল্লাহ্, তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্থ করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে, তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন— যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়। তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন, হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন, তাকে কবর আর দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুণ। (মুসলিম, হাদিস : ২/৬৩৪)
আল্লাহ রাসুল (সা.)-এর সাহাবি আওফ বিন ইবন মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে মৃত ব্যক্তির জন্য এমন দোয়া করতে দেখে— আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম যে, যদি সেই মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম।’
এনটি