ধর্মহীনতা যেভাবে আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছে
আসসালামু আলাইকুম। প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবেই প্রথমে আমি নিজের পরিচয় দেওয়া উচিত মনে করছি। এরপর ‘নাস্তিক যুক্তি’ বিষয়ে আমরা কথা বলবো। আমি ২২ বছর বয়সী আপনার একজন ভাই। যে খ্রিস্টান হিসেবে বড় হয়েছিল। আর ১৮ বছর বয়সে নিজেকে নাস্তিক বিবেচনা করেছিল।
আমি নাস্তিক হওয়ার বিশেষ ও নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছিল না। আমি কখনো ইশ্বরের প্রয়োজন অনুভব করিনি। কিংবা কোনও বাস্তবিক ‘প্রমাণ’ দেখিনি। নাস্তিকতাচর্চার এক বছর বা আরও কিছু পরে আমি মাঝে মাঝে ইশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করতাম। বিশেষত যিশুকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতাম।
আমার কাছে যেসব দুর্বোধ্যতা ছিল, তার কোনো কিছুরই সমাধান করতে পারলাম না। ফলে আমার বয়স যখন বিশ, তখন আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। ২০ বছর পার হওয়ার পর আমি অনুভব করতে শুরু করেছিলাম যে, বাস্তবতা কেমন জটিল। যেমন আমরা জানি, মহাবিশ্বও একটি জটিলতা। তাই আমি আবারও গবেষণা শুরু করেছিলাম। তবে আগের চেয়ে কিছুটা গভীরভাবে।
আমি অনলাইনে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখতে শুরু করি। কন্টেন্ট নির্মাতাদের বেশিরভাগই ছিল নাস্তিক। আর ওইসব দেখার জন্য আমি সম্ভবত দৈনিক এক ঘণ্টা ব্যয় করতাম। নাস্তিকদের বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক দেখে তাদের আমার কাছে এত নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়েছিল যে, আমি নাস্তিক প্রমাণ্যতার প্রতি এমন পক্ষপাত তৈরি করেছিলাম যে— নাস্তিকবিরোধী যুক্তি ব্যবহার করেই নাস্তিক হিসেবে যেকোনও প্রমাণ-উপাত্ত আমি সহজেই ‘নষ্ট’ করে দেওয়ার মানসিকতা রাখতাম।
আপনি খেয়াল করতে পারেন, আমি নাস্তিক শব্দটি ব্যবহার করছি— পাশাপাশি আমি পুনরাবৃত্তি করছি আমি অনেক নাস্তিক দেখেছি। এটি একটি সমস্যা। আমার বয়স যখন প্রায় একুশ, তখন একদিন আমার মনে হয়েছিল— ‘তুমি কি জানো? আমি তো নিশ্চিত, নাস্তিকদের বস্তুবাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করি।’
অবশেষে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ইশ্বরবাদের বিপরীত দিকে তাকাতে হবে। বিশেষত মৃত্যুর পর কী হবে— সে দিকে। আমি খ্রিস্টধর্মের দিকে তাকাতে শুরু করি; যারা যীশুকে ইশ্বর বলে বিশ্বাস করে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, বাইবেলে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই আমি কয়েক মাস অন্যান্য ধর্মগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে কাটিয়েছি।
সত্যি কথা বলতে কি— মুসলমানদের প্রতি আমার খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তবে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলে একজন মুসলিম লেকচারের একটি ভিডিও পাই। এটি শোনার পর আমার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে গেছে। তাই আমি ইসলামকে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেছি।
কয়েক সপ্তাহ পরে আমি লক্ষ্য করেছি যে, আমি এ পর্যন্ত যা দেখেছিলাম— সে ক্ষেত্রে কোরআনের দ্বন্দ্ব শূন্যের কোঠায়। আমি গভীরভাবে আগ্রহী হয়েছি যে, অবশেষে আমি এমন একটি বইয়ের মাধ্যমে এমন একটি ধর্ম পেয়েছি— যাতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই এবং যাতে কখনো পরিবর্তনের সামান্যতম ছোঁয়াও লাগেনি।
আমি একজন জনপ্রিয় পণ্ডিতকে দেখতে শুরু করি, যিনি কোরআনে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন। আমি তার কাছ থেকে কী শিখেছি— তা অনুসন্ধান করার পরে বুঝতে পেরেছি যে, একটি সংযোগ থাকা খুবই জরুরি। তবে আমি নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট দুইটি সংযোগ করতে পারিনি।
আমার ঈমান ছিল না তখন। আমি তখনও বিশ্বাস করতে শুরু করিনি যে, প্রভু বলতে কাউকে আমি বিশ্বাস করি। অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে আমি এক বছরের কিছুটা কম সময় অব্যাহত রেখেছিলাম। পাশাপাশি আমি একজন জনপ্রিয় মুসলিম ইউটিউবারকে দেখতে শুরু করি— যিনি কালাম কসমোলজিকাল আর্গুমেন্ট সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন।
গবেষণার পরে অবশেষে আমি এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি— যা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কোরআনকে সংযুক্ত করে। এটি আমার মনে দাগ কেটেছিল। ফলে আমি নতুন করে ভাবতে শুরু করি। আমি কোরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক অলৌকিক ঘটনাগুলি নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করি। আমার গবেষণা যত এগিয়ে যাচ্ছিল, আমি তত অবাক হচ্ছিলাম। অন্যদিকে আমি অনলাইনে অসংখ্য-অগণিত বিতর্ক দেখতে শুরু করি। বিতর্কগুলোতে আমি কখনো কোনো মুসলিমকে ব্যর্থ হতে দেখেনি। প্রত্যেকেই সর্বদা সরাসরি কোরআন থেকে উত্তর দিত। ফলে এভাবে মুগ্ধতার পথ ধরে আমি শেষ পর্যন্ত আমার উত্তর খুঁজে পেয়েছি।
আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলি। আপনি যদি স্রষ্টাকে সন্ধান করেন, তাহলে অবশ্যই নির্দ্বিধায় সত্যের সন্ধান করতে হবে। সত্য বলতে কি, আপনি আপনার প্রতি সৎ থাকুন। আর সত্য লাভে হৃদয় সদা উন্মুক্ত রাখুন।
আমি উল্লেখ করেছি যে, আমি কীভাবে নাস্তিকতাচর্চা করেছি। তথ্য অনুসন্ধানে নাস্তিকদের ঝোঁক কোন দিকে তাও উল্লেখ করেছি। সিংহভাগই নাস্তিকই কেবল নাস্তিক-পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যগুলো দেখে। ফলে তারা কেবল অর্ধেক গল্প পেয়ে থাকে। তারা অন্য নাস্তিকের কাছ থেকে যে তথ্য নিয়ে থাকে, তার কাছেই অনেক সময় সেটার সঠিক তত্ত্ব থাকে না। নিজস্ব কারণেই তাদের পক্ষপাতদুষ্ট ঝোঁক রয়েছে; আর সেসব কারণ কেবলমাত্র আল্লাহ জানেন। তবে এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে, আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের বিষয়বস্তুটি আপনাকে পক্ষপাতদুষ্ট করে তোলে।
ধরুন, কোনো নাস্তিক যদি ক্লাবে যেতে, অ্যালকোহল পান করতে ও উশৃঙ্খল জীবনযাত্রা পছন্দ করে— তাহলে সে স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে না। কারণ, তখন বিশ্বাস করলে তাকে পরিণতির কথা ভেবে এসব ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, এসবের পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু তারা এমনটা করবে না। বরং তারা মন মতো জীবনযাপন করবে।
অনেক সময় বিতর্ক করতে গিয়ে দেখবেন নাস্তিকরা আপনাকে মৌখিকভাবে আক্রমণ করবে। তাদের শব্দবাণে মনে হবে যেন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখা একটি ভয়ানক জিনিস। কারণ তারা বিপথগামী এবং তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে এটি সাযুজ্যপূর্ণ নয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, চিরস্থায়ী ভালোর জন্য তারা তাদের জীবনধারা ত্যাগ করতে রাজি নয়। আমি একবার এক নাস্তিকের ভিডিও দেখেছিলাম, ‘সে বলছিল- স্রষ্টার ইবাদত করার চেয়ে আমি বরং জাহান্নামে যেতে চাই।’
আসুন সরাসরি আমরা এই পথে আসি যে, সৃষ্টিকর্তা সত্য এবং সমগ্র অস্তিত্বের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহর আনুগত্যেরর চেয়ে পৃথিবীতে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। নাস্তিকদের মধ্যে অনেক ভালো মানুষ আছে। নানাজনকে সাহায্য করে।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটি পর্যবেক্ষণ করেছি, বিশেষত যারা স্রষ্ট নিয়ে প্রচুর গবেষণা করে, তারা দিন দিন আরও পক্ষপাতদুষ্ট হতে থাকে। কিছু নাস্তিক যেকোন দৈর্ঘ্যে যাবে এবং তারা যতটা সম্ভব যুক্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। যুক্তির পর যুক্তি খুঁজবে। অথচ এক্ষেত্রে এত জটিল হওয়ার দরকার কি আছে। আপনার তো এক মিলিয়ন যুক্তির দরকার নেই। মাত্র কয়েকটি উত্তম যুত্তি হলেই চলে।
পরিশেষে বলি, আল্লাহ সবাইকে সরল পথে পরিচালিত করুন। সালাম!
ইসলামসিটি আর্কাইভ থেকে অনুবাদ করেছেন মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন