কবরের পাশ দিয়ে কোনো আলেম হেঁটে গেলে আজাব মাফ হয়?
পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যু অবধারিত। সবার মৃত্যু একটি নির্ধারিত সময়েই তাকে আলিঙ্গন করবে। সময়ের এক মুহূর্ত আগে বা পরেও কারো মৃত্যু হবে না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না।’-(সূরা নাহল, আয়াত, ৬১)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’-( সুরা আম্বিয়া, আয়াত, ৩৫)
কেউ মারা গেলে তার স্বজন পরিচিত লোকজনের উচিত মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনা করা। এতে মৃত ব্যক্তির কবরের জীবন সুখের হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১)
পৃথিবীতে নিজের করা আমল ও মৃত্যুর পরে স্বজনদের দোয়া মৃত ব্যক্তির কাজে আসবে। এ বিষয়টি রাসুলের হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। তবে সমাজে বিভিন্ন ভুল ও অলিক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, কোনো কবরস্থানের পাশ দিয়ে বুজুর্গ বা আলেম ব্যক্তি হেঁটে গেলে ৪০ দিন পর্যন্ত কবরের আজাব মাফ হয়।
যেমন একজন জানতে চেয়েছেন- সাধারণ মানুষ এবং অনেক আলেমের মুখেও শোনা যায় যে, কোনো মুসলিম ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে সৎ-নিষ্ঠাবান আলেম হেঁটে গেলে চল্লিশ দিন পযর্ন্ত ওই কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হয়। এই কথাটির বাস্তবতা কতটুকু? কোনো সহীহ বর্ণনায় তা পাওয়া যায় কি না? দলীলসহ জানতে চাই।
এমন প্রশ্নের বিষয়ে আলেমরা বলেন, কবরস্থানে কোনো সৎ-নিষ্ঠাবান আলেম বা কোনো বুযুর্গ আল্লাহ ওয়ালার পদচারণা বা দোয়া কবরবাসীদের জন্য অবশ্যই বরকতের বিষয়। কিন্তু এর কারণে কবরের আজাব ৪০ দিন পর্যন্ত মাফ করে দেওয়া হয় বলে হাদিসে কোনো বর্ণনা নেই। এ বিষয়টি হাদিসে আছে বলে যেসব বর্ণনার কথা বলা হয় তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তাই এমন বর্ণনাকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা জায়েজ নেই। (কাশফুল খাফা, ২২১/১, ফাতওয়া, আল ফিকহুল আকবার, ৩২/২, মেশকাতুল মাসাবিহ, ১৫১/১, ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, ২২২/১৮)