কোরআনে যে ফেরেশতাদের নাম রয়েছে
কোরআন-হাদিসের বহু জায়গায় ফেরেশতাদের নিয়ে আলোচনায় এসেছে। ফেরেশতারা— আল্লাহর এক অপার সৃষ্টি। তাদের বাসস্থান আসমানে, নিজস্ব জগতে তাদের আকার-আকৃতি আছে; কিন্তু মানুষের কাছে তাদের প্রকাশ্য কোনো রূপ-আকৃতি নেই। তারা মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নবী ও রাসুলদের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতেন।
আল্লাহ তাআলা এই জাতিকে নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা মানুষের মতো রক্ত-মাংসের সৃষ্টি নয়। মানবজাতিকে সৃষ্টি করার আগেই তাঁদের আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন।
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ফেরেশতাদের নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াশূন্য অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই বস্তু থেকে যে সম্পর্কে তোমাদের বর্ণনা করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৮৫)
ফেরেশতারা কখনও আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না। তারা সব সময় আল্লাহর অনুগত হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদের আদেশ করা হয়। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত, ৩৪)
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বিস্মকর এই সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। দায়িত্ব কর্তব্যের আলোচনাও এসেছে কোরআনে। এখানে কোরাআনে বর্ণিত বেশ কিছু ফেরেশতা সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো-
জিবরাঈল (আ.)
মহান আল্লাহর বার্তা বাহক ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৮)
সুরা শুয়ারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে তাঁকে ‘রুহুল আমিন’ অর্থাৎ সৎ-আত্মা উপাধিতে সম্বোধন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সুরা মারিয়ামের ১৯ নম্বর আয়াতে ‘রসুলু রব্বিকি’ তথা তোমার রবের বার্তাবাহক উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মিকাইল (আ.)
তাঁর কাজ হলো বৃষ্টি বর্ষণ ও উদ্ভিদ উৎপাদন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মিকাইল আল্লাহর নৈকট্যশীল ও মর্যাদাবান ফেরেশতাদের একজন। তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ’ (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১০৫)
পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৮)
হজরত ইসরাফিল (আ.)
হজরত ইসরাফিল (আ.) এর দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ শিঙায় ফুৎকার দেয়া। পৃথিবী ধ্বংসের দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন তিনি তার দায়িত্ব পালন করবেন। তার নাম সরাসরি কোরআনে না এলেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, ফলে যাদের আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সবাই মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, তখনই তারা দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে।’ -(সুরা ঝুমার, আয়াত : ৬৮)
মালাকুল মাওত
তিনি হলেন মানুষের রুহ কবজকারী ফেরেশতা। পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমাদের মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফেরেশতা যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১১)
মালেক (আ.)
জাহান্নামের ব্যবস্থাপক ফেরেশতার নাম মালেক। সামুরাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসেছে। তারা বলল, যে অগ্নি প্রজ্বলিত করছিল সে হলো দোজখের তত্ত্বাবধায়ক মালেক আর আমি জিবরাঈল এবং ইনি মিকাঈল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৩৬)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদের শেষ করে দেন। সে বলবে, নিশ্চয়ই তোমরা অবস্থানকারী। ’ (সুরা যুখরুফ, আয়াত : ৭৭)
হারুত-মারুত (আ.)
পবিত্র কোরআনে এই দুই ফেরেশতার নাম একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০২)
এনটি