ফিদইয়া কী? যে কারণে ফিদইয়া দিতে হয়
আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যেসব ফরজ বিধান দিয়েছেন তা পালনে অবহেলার কোনও সুযোগ নেই । তিনি বান্দাদের ওপর সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেননি। বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে।’- (সুরা বাকারা, আয়াত, ২৮৬)
তবে বার্ধক্য, অসুস্থতা বা অপারগতার কারণে কেউ নামাজ বা রোজার মতো মৌলিক বিধানগুলো পালন করতে না পারলে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ও বিধান রয়েছে ইসলামে। এমনি একটি বিধান হলো- ফিদইয়া (বিনিময় বা মুক্তিপণ)। ফিদইয়া হচ্ছে এক ধরনের কাফফারা।
ফিদইয়ার বিধান যে কারণে
যদি কোনো ব্যক্তির অসুস্থতার কারণে অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের বিবেচনায় রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, এবং যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কাজা করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে আত্মীয়-স্বজন ফিদইয়া আদায় করবে। কেননা মারা যাওয়ার দরুন তার আর কাজা করার সুযোগ নেই। (হেদায়া : ২/১২০)
একইভাবে যদি কোন ব্যক্তি নামাজের কাজা আদায় না করেই মুমূর্ষ অসুস্থতায় হয়ে পড়ে। কিংবা মারা যায়, তাহলে তার অসুস্থ অবস্থায় কাজা হওয়া নামাজের জন্য ফিদইয়া দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫)
লক্ষণীয়
তবে নামাজের ফিদইয়ার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হলো- যদি সে ব্যক্তি দাড়িয়ে বা বসে অথবা ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়, তাহলে বিগত দিনের নামাজ কাজ আদায় করে নিবে। বসে-ইশারায় যেভাবে সম্ভব। এমতাবস্থায় শুধু ফিদিয়া আদায় করে দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না। তবে যদি উল্লেখিত কোন অবস্থায়ই যদি মৃত্যু পর্যন্ত আর নামাজ আদায়ে সক্ষম না হয়, তাহলে ফিদিয়া আদায় করবে।
আলেমদের মতে পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি যদি সুস্থ হয়ে রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার মতো শক্তি ও সাহস পায়, তাহলে তার আগের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তখন আগে আদায়কৃত ফিদইয়া সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। (কাজা করে নেবে) আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া আদায় করা অর্থাৎ একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। -(সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
নামাজের ফিদইয়া
কারো নামাজের ফিদইয়া দেওয়া আবশ্যক হলে এক্ষেত্রে প্রত্যেক দিনের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত হিসাব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়াতে হবে। (ফতাওয়া শামী-২/৭২)
রোজার ফিদইয়া
একটি রোজার ফিদিয়া এক ওয়াক্ত নামাজের ফিদিয়ার সমপরিমাণ। অর্থাৎ, প্রতিটি রোজার জন্য গরীবকে দুই বেলা খাবার খাওয়াতে হবে। বা এর সমমূল্য দান করতে হবে। -(আলমগীরী ১:১২৫, আলমগীরী ১:২০৭, হিদায়া, ১:২২২)
এনটি