কাবা শরিফের কাছাকাছি নামাজ পড়লে কি বেশি সওয়াব?
কাবা শরিফ মুসলিম বিশ্বের মূলকেন্দ্র। এখান থেকেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে আল্লাহর একত্ববাদের বাণী। ওহী নাজিলের প্রথম প্রহরগুলোতে তাওহীদের বাণী প্রচার করতে গিয়ে কাবার সামনেই মুশরিকদের অবর্ণণীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম। সব অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে একদিন কাবা ঘরকে বিশ্বাসী মুমিনদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আল্লাহর রাসুল।
ঈমানের পর ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের কাবা অভিমুখী হওয়া অবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা (নামাজের সময়) কাবার দিকে মুখ কর।` (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪৯)
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজও পালন করতে হয় কাবা শরিফকে ঘিরে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।’ (সুরা হজ, আয়াত, ২৭)
প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কামনা-বাসনা থাকে বায়তুল্লাহ বা কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। এই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রবের সামনে নিজেকে সমর্পিত করা। মনের সকল আকুতি, অনুযোগ রবের সামনে উপস্থাপন করা। তাই তো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা রবের ভালোবাসায় ছুটে আসেন কাবা শরিফে। হজের সামর্থ্য না থাকলে অনেকে আসেন ওমরা করতে।
কাবা তাওয়াফ করে নিজেকে ধন্য করেন মুসলমানরা। কাবাকে ঘিরে গড়ে ওঠা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করেন। প্রশান্ত করেন দেহ-মন। অনুভব করতে চেষ্টা করেন একদিন এই প্রাঙ্গণেই পৃথিবীবাসীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ডেকেছেন আল্লাহর রাসুল। মক্কা বিজয়ের পর সাহাবাদের নিয়ে এখানেই রবের সামনে সেজদা দিয়েছেন, আদায় করেছেন নামাজ। জীবন্ত-প্রাণবন্ত ছিল সেই নামাজ। দিগুণ সওয়াব লাভের আশায় নিজের মাঝেই সেই জীবন্ত নামাজ ধারণের চেষ্টা করেন মুমিনেরা।
বায়তুল্লাহকে (কাবা শরিফ) ঘিরে গড়ে ওঠা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় পৃথিবীর অন্য যেকোনও স্থানও ও মসজিদে নামাজের থেকে বেশি সওয়াবের। আল্লাহর রাসুল নিজের পবিত্র জবানে উচ্চারণ করেছেন সে কথা। বর্ণিত হয়েছে, ‘অন্যান্য মসজিদের নামাজেরর তুলনায় মসজিদুল হারামের নামাজ এক লক্ষ গুণ উত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪০৬)
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শুধু তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফর করা যাবে- আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী), মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা। -(সহিহ মুসলিম, সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৮৯)
অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার এই মসজিদে একটি নামাজ অন্য মসজিদে হাজার নামাজ থেকেও উত্তম। তবে মসজিদে হারাম ছাড়া। কেননা, মসজিদে হারামে একটি নামাজ অন্য মসজিদের এক লাখ নামাজের চেয়ে উত্তম। -(মুসনাদে আহমদ)
এনটি