শিশুর আকিকা দিতে না পারলে গুনাহ হবে?
শিশুদের আকিকা করা মুস্তাহাব। সন্তান জন্মের পর পশু জবাই দিয়ে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা হয়। জন্মের সপ্তম দিনে পশু জবাই করাকে মূলত আকিকা বলে। হাদিস শরিফে আকিকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুইটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯৬১)
অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)
কেউ যদি দরিদ্র হওয়ার কারণে আকিকা করার মতো সামর্থ্য না থাকে তাহলে কি এর কারণে কোনও গুনাহ হবে? বা শিশুর ওপর কি এর কোনও প্রভাব পড়বে?
এ বিষয়ে আলেমরা বলেন, আকিকা দেওয়া সুন্নত। সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা দিতে হয়। তবে কেউ অসচ্ছল হওয়ার কারণে যদি আকিকা করতে পারে তাহলে এর কারণে কোনো গুনাহ হবে না।
আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা’-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ‘আমার কয়েকজন সন্তান আছে। আমি সীমিত আয়ের মানুষ। তাই তাদের পক্ষ থেকে আকিকা করতে পারে নি। এর কারণে আমার কোনো গুনাহ হবে কি?’
ফতোয়া বোর্ড উত্তর দিয়েছিল,
إذا كان الواقع كما ذكرت من قلة ضيق اليد؛ فلا حرج عليك في عدم التقرب إلى الله بالعقيقة عن أولادك ؛ لقول الله تعالى: لا يكلف الله نفساً إلا وسعها البقرة / 286 ، وقوله: وما جعل عليكم في الدين من حرج الحج / 78 ، ولما ثبت عن النَّبيّ ﷺ أنه قال : ( إذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم، وإذا نهيتكم عن شيء فاجتنبوه ) ، ومتى أيسرت شرع لك فعلها
‘যদি বাস্তবেই আপনি গরিব হন, তাহলে আপনার জন্য আপনার সন্তানদের পক্ষ থেকে আকিকা না করাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
لا يكلف الله نفساً إلا وسعها
‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর সংকট আরোপ করেন নি।’ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের নির্দেশ দেই, তখন সাধ্যানুপাতে তা করবে আর যখন কোনো কোনো বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা থেকে বেঁচে থাকবে।’ সুতরাং যখন আপনার অবস্থা ভালো হবে তখন আকিকা করে নিবেন।’ (ফাতওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাহ ১১/৪৩৬,৪৩৭)
অনুরূপভাবে চুলের ওজন পরিমাণ রুপা বা তৎমূল্য সদকা করার বিষয়টিও একটি মুস্তাহাব আমল। অর্থাৎ, করলে সওয়াব পাবেন; না করলে গুনাহ নেই।
আলেমদের মতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নত- চাই তা মুস্তাহাব পর্যায়ের হোক না কেন; তার মাঝে উম্মতের কল্যাণ লুকায়িত থাকে। সুতরাং একটি সুন্নত ছুটে যাওয়া মানে ওই সুন্নাতের মাঝে নিহিত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। যেমন, সন্তানের আকিকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الْغُلاَمُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُسَمَّى وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ
প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (তিরমিযী ১৫২২)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহদ্দিসগণ লিখেছেন,
أن العقيقة سبب لتخليص الولد من الشيطان وحمايته منه . وقد يفوت الولدَ خيرٌ بسبب تفريط الأبوين
আকিকা সন্তানকে শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর উসিলা হয়। অনেক সময় মা-বাবার উদাসীনতার কারণে সন্তান এই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। -(যাদুল মাআ’দ ২/৩২৫)
অতএব এ বিষয়ে আলেমদের পরামর্শ হল, অভিভাবকের উচিত, সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা দেয়ার দৃঢ় নিয়ত করা এবং আল্লাহর রহমতের পরিপূর্ণ আশা রাখা। আশা রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সন্তান দিয়েছেন, চাইলে তিনি আর্থিক সংকটও দূর করে সন্তানের আকিকার ব্যবস্থা করে দিবেন। কেননা, তিনি তো সব ধরণের ব্যর্থতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত এবং পবিত্র।
আর চুলের ওজন পরিমাণ রুপা বা তৎমূল্য সদকা করার ব্যাপারে আলেমদের পরামর্শ হল, হুবহু এই পরিমাণ সদকা করা জরুরি নয়। সামর্থ্য অনুপাতে যা সম্ভব সদকা করে দেওয়া যায়।
এনটি