সুরা বাকারা পাঠের ফজিলত
কোরআনকে কালামুল্লাহ বা আল্লাহর বাণী বলা হয়। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলব, তখন কুরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিতাম।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে, সে সম্মানিত রাসুল ও পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কোরআন তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দ্বিগুণ নেকি লেখা হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৩৭; মুসলিম, হাদিস : ১৮৯৮)
বিভিন্ন হাদিসে কোরআন তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কোরআনের প্রত্যেক সুরা তেলাওয়াত ও পাঠের আলাদা আলাদা সওয়াব ও ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনের সর্বাধিক দীর্ঘ সুরা, সুরা বাকারা তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
সুরা বাকারার আয়াত সংখ্যা ২৮৬। কোরআনের প্রায় তিন পারা জুড়ে ব্যাপ্ত এই সুরা। কোরআনের সব থেকে বড় আয়াতও এই সুরার ২৮২ নম্বর আয়াত। মাদানী সুরাগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয় সুরা বাকারাকে।
এই সুরা পাঠে বিশেষ বরকত লাভ হয়। যা মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। এই সুরা পাঠ থেকে বিরত থাকলে কিয়ামতের দিন যখন এই সুরার বরকত ও বিনিময় দেখবে তখন মানুষ আফসোস করবে, কেন এই সুরা পড়েনি।
হজরত আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কিয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ। -(মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)
হজরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ আয়াতদ্বয় রাতে পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। রাবী আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, পরে আমি আবু মাসউদ (রা.)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তূল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। আমি তাকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাকে হাদীসটি শুনিয়ে দিলেন। -( সহিহ মুসলিম, ১৭৫৩)
জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহ.) থেকে আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, নাওয়াস ইবনু সাম’আন কিলাবী (রা.) বলেছেন যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন কোরআন ও কোরআন অনুযায়ী আমলকারীদের সামনে সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান পেশ করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটির জন্য তিনটি উপমা উল্লেখ করেছেন যেগুলো এখনও আমি ভুলে যাইনি। তিনি বললেন, সে দুঁটি যেন দুটি ’গামামা’ বাদল কিংবা দুঁটি কাল শামিয়ানা যার মাঝে রয়েছে দ্যুতি; কিংবা সে দুটি যেন পাখা বিস্তারকারী পাখীর দুঁটি ঝাঁক যারা তিলাওয়াতকারীদের জন্য সাহায্যকারী হবে। -(সহিহ মুসলিম, ১৭৪৯)
এনটি