উপহার আদান-প্রদান করলে যে সুসংবাদ পাবেন
উপহার বা হাদিয়া প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই সুন্নত। কোনো প্রকার শর্ত ছাড়া এবং স্বার্থ বিবেচনা না করে, কারও প্রতি অনুরাগী হয়ে যে দান বা উপঢৌকন প্রদান করা হয়, তা-ই হাদিয়া। এই হাদিয়া বা উপহার অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের সদাকাহ বা অনুদান। হাদিয়া বা উপহার দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, অতঃপর খোঁটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না। তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেওয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫২১)
বর্তমান সমাজে বড় একটি ব্যাধি পারস্পরিক হিংসা। কখনও কখনও এই হিংসা বড় ধরনের শত্রুতার সৃষ্টি করে। হিংসা দূর করার কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে পারস্পরিক হাদিয়া আদান-প্রদান। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো, এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯২৫০)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)
রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘হাদিয়া দেওয়ার মাধ্যমে মহব্বত তৈরি হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে।’ (বিহারুল আনওয়ার : ৭৪/১৬৬)
হাদিস শরিফে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘হে মুসলিম রমণীগণ! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়।’ (বোখারি, হাদিস : ২৪২৭)। আরেকটি হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টই বলেছেন, ‘আমাকে যদি (বকরির পায়ের) মাংসবিহীন চিকন হাড় খেতেও দাওয়াত করা হয়; তবু আমি সে দাওয়াত রক্ষা করব।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৫১৭৮)।
পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাদিয়ার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান কর। এর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাকে সুগন্ধি দান করা হয়, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা এটি হালকা জিনিস, কিন্তু সুগন্ধযুক্ত।’ (মুসলিম : ২২৫৩)।
আবার হাদিয়া ফিরিয়ে নেওয়াও জঘন্য কাজ। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দান করে তা প্রত্যাহার করে নেয়, তার দৃষ্টান্ত এমন কুকুরের মতো, যে বমি করে ফের তা খেয়ে নেয়।’ (বোখারি : ২৫৮৯)।
এনটি