ঝড়-বৃষ্টি ও দুর্যোগ সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন
সূচনাকাল থেকে পৃথিবী বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়েছে। অনেকের মতে, এটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবেই ঘটে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাজ-কর্মের প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে।
হাদিস শরিফে আছে, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আল্লাহ বলেন, এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। -(সূরা বাকারাহ ১৫৫)
আরও বর্ণিত হয়েছে, ..বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। -(সূরা নিসা আয়াত ৭৮)
এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবা করো।’ -(বোখারি ও মুসলিম)।আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে চলে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন।-(মিশকাত) সাহাবাদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ)
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে বিচলিত না হয়ে দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকতে পবিত্র কোরআনের বিশেষ দোয়া- ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ -(সুরা দুখান : আয়াত ১২)
এছাড়া হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। এ জন্য মুমিন মুসলমানের উচিত নিজেদের সব চাওয়াগুলো পূরণে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টিতে যদি মানুষের জন-জীবনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে কিংবা ফসলাদি নষ্ট হয় বা চলাচলের রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যায়, তবে সে অবস্থায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা।’ -(বোখারি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে (ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি) ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।’
জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। -(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া পাঠ করতেন-
‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআ’জাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্বাবলা যালিকা।’
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (তিরমিজি)।
ঝড় বা বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (বোখারি)
এই দোয়াটিও পড়া যেতে পারে,
اللهم يا كريم العطاء ويا مجيب الرجاء، ويا سميع الدعاء، ارفع عنا الوباء والبلاء يا ذا المن والعطاء، اللهم آمنا في أوطاننا واحفظ بلادنا من كل مكروه وسوء يا أكرم الأكرمين.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ، وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ، وَالكَسَلِ، وَالبُخْلِ، وَالجُبْنِ، وَضَلْعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ”.
“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ جَهْدِ البَلاَءِ، وَدَرْكِ الشَقَاءِ، وَسُوءِ القَضَاءِ، وَشَمَاتَةَ الأَعْدَاءِ”.
“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيِعِ سَخَطِكَ”.
“لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين”.
«اللهُ اللهُ رَبِّي، لا شَرِيكَ لَهُ».
”اللهم ارفع مقتك وغضبك عنا، اللهم إنا نستغيث بك فأغثنا، نشكو إليك ضعف قوتنا وقلة حيلتنا”.
«اللهم ارضنا بقضائك و بما قسمته لنا، واجعلنا من الحامدين لك في السراء والضراء، اللهم يا من لطفه بخلقه شامل، وخيره لعبده واصل، لا تخرجني وذريتي وأهلي وأحبابي من دائرة الألطاف، وآمنا من كل ما نخاف، وكن لنا بلطفك الخفى الظاهر».
«اللهم إني نسألُك العفوَ والعافيةَ، في الدنيا والآخرةِ، اللهمَّ إني نسألُك العفوَ والعافيةَ، في دِيننا ودنيانا وأهلنا ومالنا، اللهمَّ استُرْ عوراتنا، وآمِنْ روعاتنا، واحفظنا من بين يدينا، ومن خلفينا، وعن يمينا، وعن شمالنا، ومن فوقنا، ونعوذُ بك أن أنغْتَالَ من تحتنا».
« يا فارج الهمّ ويا كاشف الغم فرج همنا ويسر أمرنا، وارحم ضعفنا وقلة حيلتنا، وارزقنا من حيث لا نحتسب يا رب العالمين، اللهم إني نسألك أن تجعل خير عملنا آخره، وخير أيامنا يوم نلقاك فيه، إنّك على كل شيءٍ قَدير».
দয়াময় প্রভুর দরবারে সবিনয় প্রার্থনা, হে প্রভু! তুমি আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে বিশ্ব মানবতাকে সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা কর, আমিন।
লেখক : মাদরাসা শিক্ষক, আলেম লেখক ও গবেষক