দুর্নীতি বন্ধে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ
দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি করে মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করা জঘন্যতম অপরাধ। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
এই আয়াতের দুটি অংশে দুই ধরনের দুর্নীতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। প্রথমাংশে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় অংশটির এক অর্থ হচ্ছে, শাসকদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা কোরো না।
দুর্নীতির মূল কারণ লোভ-লালসা। মানুষ লোভ-লালসা থেকে দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কাব ইবনে মালেক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে তা যতটুকু না ক্ষতি সাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে তার ধর্মের। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)
তাই নিজের দ্বিন-ধর্ম বাঁচাতে হলে অবশ্যই লোভ-লালসা ত্যাগ করতে হবে। আর লোভ-লালসা ত্যাগ করা গেলে দুর্নীতিও কমে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
দুর্নীতির দৌরাত্ম্য বাড়ার পেছনে জ্বালানির কাজ করে ঘুষ, যা মানুষকে অভিশপ্ত করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০)
অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই সমান অপরাধী। উভয়ই দুর্নীতিবাজ। রাসুল (সা.) এই কাজে লিপ্ত নিকৃষ্ট মানুষদের অভিশাপ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ঘুষের লোভে পড়ে মানুষ কোটি কোটি মানুষের হক নষ্ট করে, যা জুলুমের শামিল।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)
নাউজুবিল্লাহ! যারা দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে, তারাও রাষ্ট্রের সব নাগরিকের ওপর জুলুম করে। কঠিন কিয়ামতের দিন তারা কতজন মানুষের ওপর জুলুমের প্রায়শ্চিত্ত করবে? কতজনের হক আদায় করতে সক্ষম হবে?
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুন। আমিন।
লেখক: সাংবাদিক, আলেম লেখক,গবেষক, খতিব ও মাদরাসা-শিক্ষক